নয়াদিল্লি: বিভীষিকায় ইতি পড়েছে বলে ধরে নিয়েছিলেন সকলে। ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাঝে কিছুটা বিরতি নিয়ে আবারও রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করেছে নোভেল করোনাভাইরাস। চরিত্রবদলে নয়া রূপে হাজির হয়েছে সে, যাতে নতুন করে ফের উদ্বেগ বেড়েছে। শুধু সংক্রমণই ছড়াচ্ছে না, নতুন করে একডজনের বেশি প্রাণহানিও ঘটাচ্ছে। কিন্তু এতদিনের ব্যবধানে আবারও করোনার এই বাড়বাড়ন্ত কেন? আবারও কি মাস্ক পরার দিন ফিরতে চলেছে (COVID and Mask Rules)? এ নিয়ে মতামত জানালেন বিশেষজ্ঞরা। (Covid-19 Spike)
করোনার নয়া রূপ JN.1-কে ‘ভ্যারিয়েন্ট অফ ইন্টারেস্ট’ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনার এই নয়া রূপ কতটা বিপজ্জনক, এখনও পর্যন্ত সম্যক ধারণা গড়ে ওঠেনি সেই নিয়ে। কিন্তু নতুন রূপে করোনার এই প্রত্যাবর্ত নে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সর্দি-কাশি হলেও আর হেলাফেলা করা যাবে না। শুধু সাময়িক অসুস্থতাই নয়, শরীরে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখে যাচ্ছে বলে মত তাঁদের। এ ব্যাপারে WHO-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন জানিয়েছেন, কেরলের কোচির হাসপাতালে এই মুহূর্তে নিউমোনিয়া আক্রান্ত যত রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের ৩০ শতাংশই করোনা পজিটিভ।
আবারও বাড়বাড়ন্ত কেন?
সৌম্যা জানিয়েছেন, গোড়া থেকেই করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন তাঁরা। JN.1 ওমিক্রনেরই পরিবর্তিত রূপ। ওমিক্রন সেই নিরিখে প্রাণঘাতী ছিল না। JN.1 ওমিক্রনের মতো হলে ঠিক আছে, আর যদি তা না হয়, তাহলে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে। এমনিতে কোনও ভাইরাস চরিত্রবদল করলে গোড়ার দিকে তার প্রভাব হয় মারাত্মক। দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। অ্যান্টিবায়োটিকও সেভাবে কাবু করতে পারে না তাকে। JN.1-ও একই ভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, নিউমোনিয়াও থাবা বসাচ্ছে শরীরে। করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও এর নেপথ্যে কাজ করছে বলে মত সৌম্যার।
আরও পড়ুন: Corona Update : ফের করোনার চোখরাঙানি ! গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৬০০-র বেশি, সতর্কবার্তা কেন্দ্রের
একাধিক বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবিটিস, ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনই, অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া, ক্লান্তি, পেশির যন্ত্রণাও দেখা দিতে পারে। আগের মতো কার্যক্ষমতাও না থাকতে পারে। তাই করোনার নয়া রূপকে মোটেই হালকা ভাবে দেখা উচিত নয় বলে মত সৌম্যার। টিকাকরণের ফলে অতিমারি পরিস্থিতি ঠেকানো গেলেও, আগামী দিনে সংক্রমণ সার্বিক আকার ধারণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাস্ক পরা কি প্রয়োজন?
আরও একটি বিষয় বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলেছে, তা হল, ওমিক্রন চরিত্র বদলে সরাসরি JN.1 রূপ ধারণ করেনি। বরং বেশ কয়েক ধাপে চরিত্রবদল হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাই ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরার অভ্যাস ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এক গাড়িতে অনেকে থাকলে, জানলা খুলে রাখা এবং মাস্ক পরা উচিত বলেও মত তাঁদের। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, একটুতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁদের বিশেষ করে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।