সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা : লিঙ্কে ক্লিক করলেই সর্বনাশ। ফোনে ঢুকছে একটা ছোট্ট মেসেজ। বলা হচ্ছে , অ্যাটাচ করা ফাইলে ক্লিক করতে। সেই ফাইলে আঙুল ঠেকালেই সর্বনাশ।  মুহূর্তের মধ্যে গোটা মোবাইল ফোনের কন্ট্রোল চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে। অভাবেই ধনে প্রাণে মারা পড়েছেন বহু মানুষ। ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়ছিল পুলিশের কাছে। তদন্তে নেমে বিরাট এক চক্রের পর্দাফাঁস করল ব্যারাকপুর কমিশনারেট।  ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টের তথ্য় হাতিয়ে  টাকা লুঠ করা সাইবার-অপরাধীদের পাণ্ডাদের হাতেনাতে পাকড়াও করল পুলিশ।  গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, ব্যারাকপুর থেকে প্রতারণা চক্রের পাণ্ডাদের গ্রেফতার করল পুলিশ।

কারা ধরা পড়ল?

বৃহস্পতিবার, মোহনপুর থানার অন্তর্গত রয়্যাল পার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। ধৃতরা সকলেই অন্য রাজ্যের বাসিন্দা। ধৃতদের নাম,   জিসান রাজিব ওরফে সাগর, শোয়েব আক্তার, গুলাম মহিউদ্দিন, আফজাল রাজা, আমির আলী, এমডি আরস, অয়ন আলী, উরজ সালফি। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩১৮(২),(৪),৩১৯(২), ৩১৬(২), ৬১(২), বিএনএস ধারায় মামলা করা হয়েছে। ধৃতদের  ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা  হয়েছে।   ধৃতদের আট দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 

কীভাবে চলত প্রতারণা চক্র? পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা টেলিগ্রাম-সহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর এক APK ফাইলে পাঠাত মোবাইল ফোনে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের নকল অ্যাপ তৈরি করেও চলত প্রতারণা। সেই APK ফাইলে ক্লিক করলেই সর্বনাশ! সিঁধ কেটে আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকে যেতে পারত প্রতারকরা। মুহূর্তের মধ্যে গোটা মোবাইল ফোনের কন্ট্রোল চলে যেত প্রতারকদের হাতে। তদন্তকারীদের দাবি, সেখান থেকেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে করা হত টাকা লোপাট। 

কী কী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ? 

গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকরা ৩১টি স্মার্টফোন, ৮ টি ল্যাপটপ, ২ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা নগদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও একাধিক ব্যাঙ্কের পাস বই, একাধিক এটিএম কার্ড ও একটি ডায়েরি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক স্তরে জালিয়াতির আশঙ্কা 

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অনুমান, এই কারবারের নেপথ্য়ে রয়েছে বড়সড় আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা চক্র। পুলিশের তরফে আগেও সাইবার প্রতারকদের বিভিন্ন ফাঁদ নিয়ে সতর্কতামূলক প্রচার করা হয়েছে। আরও একবার মোবাইল ব্যবহারকারীদের এই বিষয়ে সতর্ক করল বিধাননগর পুলিশ।