কলকাতা:সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড় উমপুন। আর এরই মধ্যে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শুক্রবার সকালে উদ্বেগ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরাহার জন্য একযোগে বৈঠকে বসে বিরোধীরা। শুক্রবার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ২২টি দলের প্রতিনিধিরা।
সনিয়া, রাহুল ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২২টি বিরোধী দলের বৈঠকে উঠে আসে করোনা আর উমপুন প্রসঙ্গ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মিলিত প্রস্তাবে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবিও ওঠে।


প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, জাতীয় বিপর্যয় কী ? আইন কী বলছে?

বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫ অনুসারে, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ঘটা দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা অবহেলার কারণে ঘটে যাওয়া কোনও মারাত্মক ঘটনা জাতীয় বিপর্যয়ের আওতায় পড়তে পারে। তার ফলে যদি মানুষের বা পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি হয়, বহু প্রাণনাশ বা সম্পত্তিনাশ হয়, তাহলে তা জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে গণ্য হতে পারে। অবশ্যই এই ক্ষতির পরিমাণ হতে হবে মোকাবিলা করার মাত্রার অতিরিক্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প, বন্যা, ভূমিধস, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, হিটওয়েভ। মনুষ্য সৃষ্ট কারণের মধ্যে আছে পারমাণবিক, জৈবিক এবং রাসায়নিক বিপর্যয় ইত্যাদি।

জাতীয় বিপর্যয়ের সংজ্ঞা কী?

২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিপর্যয় মোকাবিলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি একটি বৈঠকে বসে। সেখানে জাতীয় বিপর্যয়-কে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা হয়। তবে কমিটি কোনও নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্দিষ্ট করেনি।

"বিরলতম তীব্রতার একটি জাতীয় বিপর্যয়" বা “national calamity of rarest severity” কী

দশম ফিনান্স কমিশন (১৯৯৫-২০০০) জানায় কোনও দুর্যোগ যদি কোনও রাজ্যের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশকে প্রভাবিত করে, তাহলে তাকে
"বিরলতম তীব্রতার একটি জাতীয় বিপর্যয়" বা “national calamity of rarest severity” বলা যেতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনা আলাদা করে বিবেচ্য। কোনও নির্দিষ্ট ফর্মুলায় ফেলা যাবে না এর সংজ্ঞা, জানায় কমিশন।

কোনও দুর্যোগকে "বিরলতম তীব্রতার একটি জাতীয় বিপর্যয়" ঘোষণার অর্থ কী

যখন কোনও বিপর্যয়কে "বিরলতম তীব্রতা"র বা "গুরুতর প্রকৃতির" হিসাবে ঘোষণা করা হয়, তখন কেন্দ্রের তরফে রাজ্য সরকারকে সহায়তা দেওয়া হয়। কেন্দ্র এনডিআরএফ থেকে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবে। একটি দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল (সিআরএফ) তৈরি করা হয়, যার মোট অর্থ কেন্দ্র এবং রাজ্য ৩:১ অনুপাতে ভাগ করে নেয়। যখন সিআরএফ-এর ফান্ড অপ্রতুল থাকে, তখন এনসিসিএফ থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

শুক্রবার উমপুন বিধ্বস্ত এলাকা পর্যবেক্ষণে রাজ্যে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওইদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উমপুনে ৮০-র বেশি মানুষ মারা গেছেন, অপরিসীম ক্ষতি। এটি জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও বড় দুর্যোগ। তিনি আরও বলেন, বাংলার ৬০ শতাংশেরও বেশ মানুষ উমপুনে ক্ষতিগ্রস্ত।

শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, বাম দল, বাম ছাত্র সংগঠন সহ বিশিষ্টমহলের একাংশও উমপুনকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি তুলেছে।

সাম্প্রতিক অতীতে, রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের উত্তরাখণ্ড বন্যা, ২০১৪ সালে অন্ধ্র প্রদেশের ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ, ২০১৫ সালের অসম বন্যাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসাবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়। ২০১৮ সালে উত্তরাখণ্ডের বন্যা, ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ এবং কেরলের বন্যাকে "গুরুতর প্রকৃতির বিপর্যয়" হিসাবে ঘোষণা করা হয়।