কলকাতা: ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ির এতটুকু ক্ষতি না হলেও সরকারি ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২০ হাজার টাকা পেয়ে গেছেন মালিক! ঠিক তারপরই স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে কাটমানি হিসেবে দিতে হয় অর্ধেক টাকা। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে উঠল এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।


জলঙ্গির বাসিন্দা নাসিমুল হক বলেন, আমার বাড়ি ভাঙেনি, আমায় ফোন করে দলিলের নম্বর চান এক তৃণমূল নেতা, তারপর দেখি টাকা ঢুকেছে। তবে, অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা ঢুকতেই, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জলঙ্গি পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী মইদুল ইসলামকে কাটমানি দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ!


আরেক বাসিন্দা তফিউল হাসান বলেন, টাকা ঢোকার পর তৃণমূল নেতা বলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে, ওটা নাকি পঞ্চায়েতে দিতে হবে, আমি ১০ হাজার দিয়েছি।


স্থানীয় সূত্রে দাবি, ওই তৃণমূল নেতা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনিও পেয়েছেন ক্ষতিপূরণের টাকা! অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও, তাঁর স্ত্রী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন।


দলীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে কড়া ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি আবু তাহের বলেছেন, জেলাশাসককে বলেছি তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে প্রধান থেকে নেতারা টাকা নয়ছয় করেছে, দল তদন্ত করে দোষ প্রমাণ হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।


ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরিতে দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে উঠেছে অভিযোগ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাসক নেতৃত্ব কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


বেশ কয়েক জায়গায় কড়া পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে! কিছু কিছু জায়গায় টাকা ফেরতের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু, তারপরও অভিযোগ ওঠা থামছে না!


যেমন, ত্রাণের টাকা থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে জীবনতলা থানা এলাকার নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেও।


স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, তিনি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার পর থেকেই তাঁর থেকে কাটমানি চেয়ে হুমকি দিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান। পঞ্চায়েত প্রধানের অনুগামীর কাছে তিনি কিছু টাকাও দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই স্থানীয় বাসিন্দার।


তারপরও নিস্তার না পেয়ে মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। অভিযুক্ত পঞ্চয়েত প্রধান জানান, তিনি এলাকায় মাদক কারবারের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করছেন।


পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাননি, উল্টে তৃণমূলের কেন্দামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের আত্মীয়রা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।


উত্তর ২৪ পরগনায় শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ যাদের দোতলা কিংবা পাকা বাড়ি, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে শাসক দল।