নয়া দিল্লি : মারাত্মক অভিযোগ দিল্লির এক বহু পরিচিত আশ্রমের 'বাবা'- র বিরুদ্ধে। রাজধানীর বসন্ত কুঞ্জ যথেষ্ট অভিজাত এলাকা। সেখানেই রয়েছে এই আশ্রম। আর তার ডিরেক্টরের বিরুদ্ধেই উঠেছে মহিলাদের যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ। আশ্রমের ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা করতেন আশ্রমেরই ডিরেক্টর, এমনই মারাত্মক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
শ্রী সারদা ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর স্বামী চৈতন্যনন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথির বিরুদ্ধে উঠেছে এ হেন গুরুতর অভিযোগ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অভিযোগ, এই সংস্থায় ম্যানেজমেন্ট ডিপ্লোমা কোর্সের স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্রীদের দিনের পর হেনস্থা করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, ইকোনমিকালি উইকার সেকশনের স্কলারশিপের আওতায় যেসমস্ত ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করতে আসেন, তাঁদেরকেই নিশানা করেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৩২ জন ছাত্রীর মধ্যে অন্তত ১৭ জন তাঁদের বয়ান দিয়েছেন। সকলের তরফেই অভিযোগ এসেছে স্বামী চৈতন্যনন্দের বিরুদ্ধে। অশ্লীল ভাষার ব্যবহার, আপত্তিজনক মেসেজ পাঠানো- কোনও কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না অভিযুক্ত ব্যক্তি, এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন ছাত্রীরা। আরও অভিযোগ, এই ব্যক্তি ছাত্রীদের সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্কও করতেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এখানেই শেষ নয়। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের অভিযোগ যে, সংস্থার মহিলা ফ্যাকাল্টি এবং প্রশাসনিক কর্মীরা তাঁদের উপর জোর করতেন এইসব অন্যায় দাবি মেনে নেওয়ার জন্য। ছাত্রীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই আশ্রমে এমন অনেকেই ওয়ার্ডেন হিসেবে কর্মরত যাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ছাত্রীদের পরিচয় করিয়ে দিতেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যনন্দ ছাত্রীদের নিজের ঘরে ডেকে পাঠাতেন। তারপর বিনামূল্যে বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দেখাতেন। সেই সঙ্গে মেসেজে চলত অত্যন্ত 'নোংরা' ভাষায় চ্যাট। ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যৌন হেনস্থার মামলা রুজু করেছে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও অনেক ধারাতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশের (দক্ষিণ-পূর্ব) ডেপুটি কমিশনার অমিত গোয়েল এমনটাই জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই প্রতিষ্ঠানে হানাও দিয়েছে। অভিযুক্তের ডেরাতেও হানা দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফে। তবে এখনও পলাতক অভিযুক্ত স্বামী চৈতন্যনন্দ। সূত্রের খবর, একবার আগ্রার কাছে নাকি তাঁকে দেখা গিয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশের একাধিক দল। অন্যদিকে জাতীয় মহিলা কমিশন ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে একটি ভলভো গাড়িরও খোঁজ পেয়েছি পুলিশ। সেই গাড়ির নম্বর প্লেটে রয়েছে বিস্তর গন্ডগোল। পুলিশ সূত্রে খবর, দূতাবাসের একটি ভুয়ো নম্বর রয়েছে ওই গাড়ির নম্বর প্লেটে। জাল ডিপ্লোম্যাট নম্বর যুক্ত গাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্বামী চৈতন্যনন্দের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ সামনে আসার পর আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাঁকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং একই সঙ্গে তাঁকে আশ্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।