নয়াদিল্লি: নয় নয় করে একমাস পার হয়ে গিয়েছে। আমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়া নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছেই। আর সেই আবহেই বিমানের ককপিটে ক্যামেরা বসানোর দাবি জোরাল হতে শুরু করল। ককপিটে পাইলটরা কী কথা বলছেন, তার অডিও রেকর্ডিং সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে এই মুহূর্তে। কিন্তু পর পর বিমান দুর্ঘটনার জেরে ককপিটের ভিতর ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠছে। বলা হচ্ছে, ককপিটের ভিতর ভিডিও রেকর্ডিং-এর ব্যবস্থা থাকলে, দুর্ঘটনার মুহূর্তে ঠিক কী ঘটছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। (Ahmedabad Plane Crash)

আমদাবাদে ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের অডিও রেকর্ডারটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তাতে দুই পাইলটের কথোপকথনের যে অডিও রেকর্ডিং সামনে এসেছে, তা নিয়ে কম জলঘোলা হচ্ছে না। ওই অডিও রেকর্ডিংয়ে এক পাইলট অন্য পাইলটকে জিজ্ঞেস করেন, “জ্বালানি বন্ধ করে দিলে কেন?” উল্টো দিক থেকে জবাব আসে, “আমি করিনি।” বিমান দুর্ঘটনার যে অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে ওই কথোপকথন জায়গা পেয়েছে। সেই নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনাও চলছে এই মুহূর্তে। (Cameras in Cockpits)

কিন্তু এসবের মধ্যে দেশের অন্দরে তো বটেই, বিদেশেও ককপিটে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে দাবি উঠছে। বিমানে যাবতীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকলেও, ককপিটে কেন ক্যামেরা নেই, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, মারাত্মক কিছু ঘটলে, এই মুহূর্তে অডিও রেকর্ডিংয়ের উপরই ভরসা করতে হয়। কিন্তু ককপিটে ক্যামেরা বসানো থাকলে, ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে, ঠিক কী ঘটেছিল, তা বোঝা সম্ভব হবে। 

ককপিটে ক্যামেরা বসানোর এই দাবি যদিও নতুন কিছু নয়। আমেরিকার বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা National Transportation Safety Board আজ থেকে ২৫ বছর আগেই ককপিটে ক্যামেরা বসানোর দাবি তুলেছিল। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে যে সমস্ত বিমান পরিষেবা প্রদান করছে, তার ককপিটে ক্যামেরা বসানো মুশকিল। সেগুলির বয়স প্রায় একদশক। ভিতরে এমন ভাবে তারের নেটওয়র্ক ছড়িয়ে যে নতুন করে ক্যামেরা বসানো সহজ হবে না। তবে নতুন যে বিমান তৈরি হচ্ছে, তাতে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে মত তাঁদের।

বিমানের ককপিটে ক্যামেরা না বসানোর নেপথ্যে নৈতিক কার্যকারণও রয়েছে। সাধারণ কর্মজীবী মানুষের মতো, পাইলটদের মধ্যেও মতবিরোধ হয়। তাঁরাও তর্ক-বিতর্কে জড়ান। সেই সব ক্যামেরাবন্দি করা হলে, গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও খর্ব হয়। ককপিটে ক্যামেরা বসিয়ে বিমান সংস্থাগুলি পাইলটদের নজরবন্দি করে রাখতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ভিডিও যদি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাতে মানুষজন আতঙ্কিতও হয়ে পড়তে পারেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের অডিও রেকর্ডিং-এ চিৎকার, কান্না শুনে প্রচণ্ড আঘাত পেতেও দেখা গিয়েছে নিহতদের পরিবার পরিজনকে। সেই ঘা কখনও শুকোয়নি তাঁদের।

এই সমস্ত কারণকে সামনে রেখে মূলত আমেরিকার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকেই ককপিটে ক্যামেরা বসানোর বিরোধিতা করা হয়। পাশাপাশি, পাইলটদের অধিকাংশও ককপিটে ক্য়ামেরা বসানোর ঘোর বিরোধী। ক্যামেরা সচেতন হতে গেলে, মাথা ঠান্ডা রেখে, হেসে খেলে দায়িত্ব সামলানো সম্ভব হবে না বলে মত তাঁদের।