জয়সলমের: মরুরাজ্যে মাটি খুঁড়তে হঠাৎই জলের তোড়ে ভেসে গেল চারিদিক। আশেপাশের জমি ভরে গেল জলে। ট্রাক-সহ সমস্ত সরঞ্জাম অর্ধেক ডুবে গেল। ফোয়ারার আকারে মাটি ফুঁড়ে উঠে এল জলে ধারা। আর সে নিয়েমাটিই শোরগোল গোটা দেশে। পৌরাণিক সরস্বতী নদীই মাটি ফুঁড়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দিল কি না উঠছে প্রশ্ন। (River Saraswati)


রাজস্থানের জয়সলমেরের ঘটনা। তারাগড় গ্রামে টিউবওয়েলের জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছিল। সেই খোঁড়াখুঁড়ির সময়ই আচমকা বিপত্তি বাধে। মাটি ফুঁড়ে ফোয়ারার আকারে জলের ধারা বেরোতে শুরু করে। দেখতে দেখতে চারপাশ ডুবে যায়। ২২ টন ওজনের সরঞ্জাম সমেত একটি ট্রাক মাটিতে বসে যায়। (Jaisalmer Water Burst)


সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেই নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মরা নদী বেঁচে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। সেই দৃশ্য দেখতে এলাকায় ভিড় করছেন মানুষজন।  হাজার হাজার বছর আগে মাটির নীচে চাপা পড়ে যাওয়া নদী পুনর্জীবন পেয়েছে বলে দাবি উঠে আসছে। 



প্রাচীন ঋগ্বেদে সরস্বতী নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে সরস্বতী নদীকে 'নদীতমা' অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ নদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য পৌরাণিক লেখালেখিতে বার বার উল্লেখ পাওয়া যায় সরস্বতী নদীর। আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে ওই নদী শুকিয়ে যায়, মাটির নীচে হারিয়ে যায় বলে জানা যায়। তাই নদীর পুনর্জীবন পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি।


কিন্তু মরুরাজ্যে সরস্বতী নদী পুনর্জীবন পায়নি, বরং গোটা ঘটনাক্রমের নেপথ্যে বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁরা ওই জলের ধারাকে ভৌমজল বলে উল্লেখ করছেন। তাঁদের মতে, এক্ষেত্রে ভৌমজল স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠে এসেছে ফোয়ারার আকারে। 


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাটির নীচে বেলেপাথরের মোটা আস্তরণের মধ্যে আটকে ছিল ভূগর্ভস্থ দল। খোঁড়াখুঁড়ির সময় চাপ পড়ে ফাটল ধরে ওই আস্তরণে। এর ফলে ফোয়ারার আকারে তীব্র গতিতে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে ওই জল। বেশ কয়েক দিন স্থায়ী হলেও, ধীরে ধীরে জল বেরনো বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা। তেমনই ঘটেছে এক্ষেত্রে। রবিবার থেকে জল বেরনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়সলমেরের জেলাশাসক প্রতাপ সিংহ নাথাওয়াত।


সরস্বতী নদীর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে যদিও একমত নন বিজ্ঞানীরা। দেশের কিছু জায়গায় এখনও সরস্বতী নদী বয়ে চলেছে। রাজস্থানে সরস্বতী নদী বিলুপ্ত হওয়ার নেপথ্যে ভৌগলিককে কার্যকারণকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। জলবায়ু পরিবর্তন, টেকটোনিক পাতের গতিবিধি পরিবর্তন এবং মনুষ্যঘটিত কারণকে দায়ী করেন কেউ কেউ।