নয়াদিল্লি: যুদ্ধ থামিয়ে গাজ়ায় শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পরই ২০ দফার প্রস্তাব পেশ করলেন তিনি (Donald Trump)। নেতানিয়াহু ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন বলে খবর। হামাসের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তারা প্রস্তাবগুলি পর্যালোচনা করে দেখছে বলে খবর। (Gaza Peace Plan)
গাজ়ায় শান্তি ফেরাতে হোয়াইট হাউসের তরফে যে ২০ দফার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, সেগুলি হল-
১) গাজ়াকে মৌলবাদ মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত করে তুলতে হবে, যাতে পড়শি দেশে বিপদ নেমে আসার কোনও ঝুঁকি না থাকে।
২) গাজ়ার পুনরোন্নয়ন, যাতে গাজ়াবাসীই লাভবান হবেন।
৩) দুই পক্ষ রাজি হলে, সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ থেমে যাবে। ইজরায়েলি সেনাকে সরে যেতে হবে গাজ়া থেকে। প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে।
৪) ইজরায়েল প্রস্তাব গ্রহণ করলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত বন্দি, জীবিত হোক বা মৃত, ফেরাতে হবে।
৫) সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলে, যাবজ্জীবনের সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দি, সেই সঙ্গে গাজ়ার ১৭০০ নাগরিককে মুক্ত করবে ইজরায়েল, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর যাঁদের বন্দি করা হয়েছিল, নারী, শিশু নির্বিশেষে সকলকে। গাজ়া থেকে মৃত ইজরায়েলি বন্দিদের একজনের দেহ বেরোলে, তার পাল্টা গাজ়ার ১৫ জনের দেহ ফেরাতে হবে ইজরায়েলকে।
৬) সব বন্দিকে ফেরানো হলে হামাসের সেই সব সদস্যদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যাঁরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হবেন এবং অস্ত্র ত্যাগ করবেন। গাজ়া ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইবেন যাঁরা, তাঁদের জন্য নিরাপদ করিডর তৈরি করে দেওয়া হবে।
৭) প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হলে গাজ়ায় সম্পূর্ণ সাহায্য ও ত্রাণ পাঠানো হবে। জল, বিদ্যুৎ, নিকাশি কাঠামোর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে। হাসপাতাল, কারখানাগুলিকে দাঁড় করানো হবে পুনরায়। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বের করা হবে রাস্তাঘাট।
৮) কোনও রকম বাধাবিঘ্ন ছাড়া ত্রাণ পৌঁছবে গাজ়ায়। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং তাদের সংস্থাগুলি তদারকি করবে সবকিছুর। রাফার দুই দিকের ক্রসিংও উন্মুক্ত হবে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী।
৯) আপাতত গাজ়ায় শাসনকার্য পরিচালনা করবে একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক, প্যালেস্তিনীয় কমিটি। তারা গাজ়ার মানুষের জন্য জনসেবা ও পরিষেবামূলক কাজগুলি পরিচালনা করবে। ওই কমিটিতে যোগ্য প্যালেস্তিনীয়রা থআকবেন, থাকবেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন ‘Board of Peace’ সবকিছু তদারকি করবে। অন্য রাষ্ট্রনেতারাও থাকবেন কমিটিতে, থাকবেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার। গাজ়ার পুনরোন্নয়নে বরাদ্দ অর্থ, পরিকাঠামো, সবকিছু ওই কমিটিই ঠিক করবে। গাজ়াকে আধুনিক করে তুলতে, সেখানে বিনিয়োগ টানতে যোগদান থাকবে ফ্রান্স এবং সৌদি আরবের।
১০) গাজ়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা, তা রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবে বিশেষজ্ঞদের কমিটি। বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
১১) বিশেষ ইকনমিক জ়োন তৈরি করা হবে, শুল্কের কাটামো গড়ে তোলা হবে, বিভিন্ন দেশের মতামত নেওয়া হবে এব্য়াপারে।
১২) কাউকে গাজ়া ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। যাঁরা চলে যেতে চাইবেন, তাঁদের বাধা দেওয়া হবে না। আবার কেউ ফিরতে চাইলেও পারবেন। তবে গাজ়াকে নতুনরূপে গড়ে তোলার জন্য সকলকে গাজ়ায় থাকতে উৎসাহিত করছি আমরা।
১৩) হামাস এবং তাদের অন্য শাখাগুলি গাজ়ার শাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। প্রত্যক্ষ ভাবেও নয়, পরোক্ষ ভাবেও নয়। সমস্ত সামরিক, সন্ত্রাসী, আক্রমণের পরিকাঠামো, সুড়ঙ্গপথ থেকে অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা ধ্বংস করতে হবে। সেগুলি পুনরায় গড়ে তোলাও যাবে না। গাজ়ার অসামরিকীকরণে নিরপেক্ষ সংস্থা দায়িত্বে থাকবে। নতুন যে গাজ়া তৈরি করা হবে, তা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে।
১৪) হামাস এবং তাদের অন্য শাখা যাতে প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য বিপজ্জনক না হয়ে ওঠে, তার গ্যারান্টি দিতে হবে সহযোগী আঞ্চলিক দেশগুলিকে।
১৫) আরব এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সাময়িক ভাবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা হবে, যারা গাজ়ায় মোতায়েন থাকবে। প্যালেস্তাইনের বৈধ পুলিশবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে তারা। জর্ডন এবং মিশরের সাহায্য় নেওয়া হবে এক্ষেত্রে। সীমান্তের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে ইজরায়েল এবং মিশরের সঙ্গে কাজ করবে ওই বাহিনী। প্যালিস্তিনীয় পুলিশও যুক্ত থাকবে তাতে।
১৬) ইজরায়েল গাজ়া দখল করবে না, গাজ়ার কোনও অংশকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না। এই মুহূর্তে গাজ়ার যে অংশ ইজরায়েলি বাহিনীর দখলে রয়েছে, তা একে একে ফেরত দিতে হবে। গাজ়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যেতে হবে তাদের।
১৭) হামাস যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে বা ঢিলেমি করে, সেক্ষেত্রে গাজ়াকে সন্ত্রাসমুক্ত করার কাজ আরও দ্রুত গতিতে এগোবে। ইজরায়েলি বাহিনীর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী সেই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে।
১৮) প্যালেস্তিনীয় এবং ইজরায়েলিদের মানসিকতা, তাঁদের ভাষ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে, সহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য একটি আন্তঃধর্মীয় আলোচনা প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
১৯) গাজ়ার পুনরোন্নয়ন চলাকালীন প্যালেস্তিনীয়দের জাতিগত অধিকার, তাঁদের রাষ্ট্রের দাবিকে মর্যাদা দেওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে হবে, যা তাঁদের আশা-আকাঙ্খা হিসেবে স্বীকৃত।
২০) ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, যাতে শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সহাবস্থানে একমত হওয়া যায়।