নয়া দিল্লি: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সোমবারের মধ্যে নিউইয়র্ক রাজ্যের একটি আদালতে ৪৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের বন্ড জমা দিতে হবে, এমনটাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প তাঁর সম্পদের অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়েছেন বলে আদালতের বিচারক তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেছিলেন। 


তবে মঙ্গলবার জানা গিয়েছে, সম্পদ বাজেয়াপ্তের শঙ্কা থেকে বেঁচে গিয়েছেন ট্রাম্প। আদালতের নির্দেশে ৪৬ কোটির বদলে আপাতত তাকে দিতে হবে ১৭ কোটি ডলারের বন্ড। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আপাতত ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বন্ড জমা দিতে হবে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। 


ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঋণ সুবিধা পেতে সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন অতিরঞ্জিত করে। এমনকি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের দাতাদের কাছ থেকে ফান্ড তোলার সময় ভুল তথ্য দিয়েছেন। নিউইয়র্কের প্রতারণা মামলায় গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পকে ৩৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার জরিমানা করা হয়। সুদসহ তা দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার।


যদিও জানা গিয়েছে ট্রাম্পের মোট সম্পদ ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বেড়েছে। প্রথমবারের মতো, ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্সে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ৫০০ জনের তালিকায় যোগ দিয়েছেন।


ট্রাম্পের সম্পত্তি তরজা


শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প যে পোস্ট করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন যে তাঁর কাছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার নগদ রয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের কাছে দেওয়া এক জবানবন্দিতে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তাঁর কাছে ৪০ কোটি ডলারের বেশি নগদ অর্থ রয়েছে।


তবে এর আগে ট্রাম্প যা দাবি করেছিলেন, এই অর্থের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। ২০২১ সালের ৩০ জুন তিনি নিজের যে আর্থিক পরিস্থিতি আদালতে জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন যে সে সময় তাঁর হাতে ২৯ কোটি ৩৮ লক্ষ ডলারের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা নগদ অর্থ সমতুল্য সম্পদ ছিল। ফেডারেল সরকারের কাছে ২০২৩ সালের আগস্টে ট্রাম্প যে আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, তাতে দেখা গেছে যে তাঁর আয়ের নানা রকম উৎস রয়েছে।


ট্রাম্প ২০২২ সালে জানান, তিনি গলফ কোর্স ও হোটেল থেকে আয় করেছেন ৫৩ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার, লাইসেন্স ফি ও রয়্যালটি থেকে ৩ কোটি ডলার, ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ২ কোটি ৬৫ লক্ষ ডলার এবং বিভিন্ন ভবনের মালিকানা থেকে তাঁর প্রাপ্তি ৬ কোটি ১১ লক্ষ ডলার। এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তৃতা করে আয় করেন ৬২ লক্ষ ডলার। পাশাপাশি ওই বছর স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যান্ড আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস থেকে পেনশন বাবদ ১ লক্ষ ১৬ হাজার ১০৩ ডলার আয় করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। ২০২২ সালে ট্রাম্প আরও জানিয়েছিলেন যে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত তাঁর হোটেল থেকে তিনি পেয়েছেন ২৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ডলার। এই আয়ের মধ্যে ছিল হোটেলটি বিক্রি বাবদ লাভ। একই সঙ্গে দুটি হেলিকপ্টার বিক্রি করে তিনি পেয়েছিলেন ১০ লক্ষ ডলার।


সম্পত্তি


হোটেল, অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, গলফ কোর্স ও জমির মালিক ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালের জুনে তাঁর আর্থিক বিবরণীতে তিনি দামি যেসব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে ছিল নিউইয়র্কের ৪০ ওয়াল স্ট্রিটে অবস্থিত একটি অফিস ভবন, ম্যানহাটানে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ার ও ফ্লোরিডার পাম বিচের অবকাশযাপন কেন্দ্র মার-এ-লাগো। ওই বিবরণীতে বলা হয়েছিল, ট্রাম্পের সম্পত্তির মূল্য ওই সময়ে ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। আর তাঁর ঋণ ও অন্যান্য দায়ের আর্থিক মূল্য ছিল ৪৩ কোটি ৯২ লাখ ডলার। বলা হয়, তিনি মোট ৪৫০ কোটি ডলারের মালিক।সম্পত্তির মধ্যে গলফ ক্লাব ও অন্যান্য ক্লাব অবকাঠামোর দাম দেখানো হয় ১৭৬ কোটি ডলার, নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ার ও ট্রাম্প প্লাজা ৫২ কোটি ৪৭ লক্ষ ডলার এবং আরও দুটি ভবনের আংশিক মালিকানা বাবদ তাঁর হিস্যা ৬৪ কোটি ৫৬ লক্ষ ডলার।



তবে নিউইয়র্কের মামলায় আদালত বলেছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক বছর যাবৎ তাঁর সম্পত্তির মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে তিনি ৪০ ওয়াল স্ট্রিটের সম্পত্তির মূল্য ১২ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছেন, আর ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক রাজ্যের সেভেন স্প্রিং সম্পত্তির দাম বেশি দেখিয়েছেন ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার।