নয়াদিল্লি: ইরানের সঙ্গে টানাপোড়েন চলাকালীন ফোন এসেছিল রাশিয়া থেকে। দেশের প্রেসিডেন্ট, স্বয়ং ভ্লাদিমির পুতিন সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নাকি মুখের উপর পুতিনকে না বলে দেন। এবার এমনই দাবি করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাবি, ইরান বনাম ইজরায়েল যুদ্ধে নয়, রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানতে সাহায্য় প্রয়োজন বলে পাল্টা পুতিনকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। (Donald Trump)
নেদারল্যান্ডসে NATO সম্মেলনে যাওয়ার পথে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ Air Force One বিমানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই দাবি করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, "রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চাই আমি। জানেন কি, ভ্লাদিমির (পুতিন) আমাকে ফোন করেছিলেন। বললেন, ইরান নিয়ে সাহায্য় করব আমি? আমি বললাম, না, ইরান নিয়ে কোনও সাহায্য চাই না। বরং তোমার ব্যাপারেই সাহায্য় প্রয়োজন। আশাকরি রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা হবে আমাদের।" (Vladimir Putin)
ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলাকালীন পুতিনের অবস্থান নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। ইরানের উপর ইজরায়েলের হামলার নিন্দা করলেও, ইরানের পাশে থাকার বার্তা দিলেও, তেহরানকে সামরিক সাহায্য় প্রদান নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি পুতিন। ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে মস্কোয় জরুরি বৈঠকও করেন তিনি। কিন্তু ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে ইরানের উপর আঘাত হানে আমেরিকা, ইরানের বন্ধু হিসেবে তেমন সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি রাশিয়াকে। ট্রাম্পের দাবি, পুতিন নিজেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
বরং শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। জানা যায়, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নিজে কথা বলেন ট্রাম্প, তাঁকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করান। কাতারের মধ্যস্থতায় অন্য একটি দল ইরানকে রাজি করায়। যুদ্ধবিরতির পরও ইরান এবং ইজরায়েল শর্ত লঙ্ঘন করে, পরস্পরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। সেই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। ইরানের চেয়েও ইজরায়েলের উপর বেশি ক্ষুব্ধ বলে জানান। তবে এর পর আর ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় হয়নি দুই দেশের মধ্যে।
ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা করানোর দিকে হাঁটছেন। নয় নয় করে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলছে দুই দেশের মধ্যে। প্রাণহানি, সম্পত্তিহানি ঘটেই চলেছে। আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির কথা বার বার উঠলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। ইরান ও ইজরায়েলের দ্বন্দ্বে পুতিন যে সক্রিয় ভূমিকা নেননি, তার জন্যও ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধকে দায়ী করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, তিন বছর ব্যাপী যুদ্ধ নিয়ে এমনিতেই টানাপোড়েন চলছে। আর একটি যুদ্ধের জড়াতে রাজি ছিলেন না তিনি।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ইতি পড়ার কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। এর আগে, মে এবং জুন মাসে রাশিয়া ও ইউক্রেন মুখোমুখি আলোচনায় বসে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির দিকে এগোয়নি তারা। বরং ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা বেড়েছে সময়ের সঙ্গে। রাশিয়ার বায়ুসেনা ঘাঁটি কার্যত ছারখার করে দেয় ইউক্রেন। দুই দেশের মধ্যে শান্তিস্থাপন করতে না পেরে প্রকাশ্যে মেজাজ হারাতে পর্যন্ত দেখা যায় ট্রাম্পকে। হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের সামনেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বাদানুবাদ হয় তাঁর। যেনতেন প্রকারে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চান ট্রাম্প। এতে তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার রাস্তাও প্রশস্ত হবে বলে মত অনুরাগীদের।