নয়াদিল্লি: ঘুষ দিয়ে সরকারি প্রকল্পের বরাত হাসিল করা নিয়ে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আমেরিকার আদালত। কিন্তু ঘুষ দেওয়াকে এবার আইনত বৈধ করে তুলতে উদ্যোগী হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়ে দিলেন, এত নিষেধাজ্ঞা থাকলে আমেরিকার সংস্থাগুলি অসুবিধেয় পড়বে। ঘুষ দিয়ে বরাত হাসিল করার যে আইন, তাও তুলে নিতে নির্দেশ দিলেন তিনি। (Donald Trump)


ঘুষ-বিরোধী আইন তুলে নেওয়ার নির্দেশে সই করে দিয়েছেন ট্রাম্প। অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে নির্দেশ দিয়েছেন, Foreign Corrupt Preatices Act-এর (FCPA) আওতায় পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে। নয়া আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না আপাতত। এই মুহূর্তে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে যাঁদের বিরুদ্ধে, বা অতীতে যাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল, সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলি নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। (Gautam Adani)


এতদিন যে আইন চালু ছিল আমেরিকায়, সেই অনুযায়ী, কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি যাঁর সঙ্গে আমেরিকার সংস্থাগুলির সংযোগ রয়েছে, অন্য কোনও দেশের সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ বা দামি উপহার দিয়ে বরাত হাসিল করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঘুষ দেওয়ার প্রমাণ মিললে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করার নিদানও ছিল। আমেরিকার বিচার বিভাগ পদক্ষেপও করতে পারত। প্রথম বার আমেরিকার মসনদে বসেই সেই আইন বাতিল করতে উদ্যত হয়েছিলেন ট্রাম্প। সেবার সফল না হলেও, এবার ওই আইন বাতিল করতে নির্দেশ দিলেন তিনি। 


ট্রাম্প সরকারের মতে, FCPA আইনে বহু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাকিরা যে সমস্ত কাজ অনায়াসে করতে পারে, আমেরিকার সংস্থাগুলির তা করার অনুমতি নেই। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। খেলার মাঠে সমান সুযোগ মেলে না। এতে আমেরিকার সংস্থাগুলিরই ক্ষতি। ট্রাম্পের বক্তব্য, "শুনতে ভাল লাগলেও, FCPA বিপর্যয় ছাড়া কিছু নয়। এর জন্যই আমেেরিকার সঙ্গে কেউ ব্যবসা করতে চায় না। কোনও আমেরিকান যদি বিদেশের কোনও দেশে ব্যবসা করতে চান, সেক্ষেত্রে তদন্ত শুরু হতে পারে। এতে আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করতেই রাজি হন না কেউ।"


ট্রাম্পের এই নির্দেশ ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং তাঁর সংস্থার জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ আমেরিকা থেকে তোলা টাকায় ভারতের একাধিক রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের ২০০০ কোটি টাকার বেশি ঘুষ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত হাসিল করার অভিযোগ রয়েছে আদানি এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে। FCPA আইনেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সেই নিয়ে আদানি, তাঁর ভাইপো সাগর এবং সংস্থার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়। বিনিয়োগকারীদের টাকায় ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি তাঁরা চেপেও যান বলে অভিযোগ। 


আদানি গোষ্ঠী গোটা বিষয়টিকে 'ভারতকে বদনাম করার চেষ্টা' বলে উল্লেখ করলেও, আইনি ঝামেলা জর্জরিত হতে হয় তাদের। শেয়ার বাজারে প্রবল ক্ষতি হয়। ট্রাম্প এবার সেই FCPA আইনই বাতিলের নির্দেশ দিলেন। এমনকি নয়া নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দিলেন। ফলে শাস্তির মুখে না-ও পড়তে হতে পারে আদানি গোষ্ঠী। নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরের ঠিক আগেই ট্রাম্পের এই নির্দেশ নেহাত কাকতালীয় ঘটনা নয় বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।