কলকাতা: অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুর্গার জয় কিংবা রাবণকে পরাস্ত করতে রামের বিজয়লাভের মধ্য দিয়েই দেশজুড়ে অঞ্চলভেদে পালিত হয় বিজয়া দশমী এবং দশেরা উৎসব। শ্রীশ্রীচণ্ডী কাহিনী অনুসারে, দেবীর আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে। শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। তাই বিজয়া দশমী এই বিজয়কেই চিহ্নিত করেন।
অপরদিকে, মহিষাসুর বধ কাহিনীতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তাঁর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেনমা দুর্গা। তাই তাকে 'বিজয়া' বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই দিনটিকে 'বিজয়া দশমী' হিসেবে পালন করা হলেও সারা দেশে তা 'দশেরা' নামেই পালিত হয়। দশেরা বা দশহরা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয়, দশ+অহ। 'অহ' শব্দের অর্থ হল দিন। ৯ রাত্রি ১০ দিন ধরে লড়াই শেষে এই দিন দেবীর জয়ের দিন। অন্যদিকে এই দিনেই লঙ্কাধিপতি রাবণকে পরাস্ত করে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন রাম।
শাস্ত্রমতে, এই দিনে দেবী দুর্গার বিসর্জন কিংবা রাবণের মূর্তি পোড়ানো বিশেষ বার্তাবহ। অশুভ শক্তিকে নাশ করে শুভ শক্তির সঞ্চারের প্রতীকী এই উৎসব। দেবীকে বিসর্জনের পরও বলা হয়, "আসছে বছর আবার এসো।" বিভেদ ভুলে আলিঙ্গন, মিষ্টিমুখ যেন শুভ সূচনার দ্যোতক। শত্রু বিনাশ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক প্রয়াস এই বিজয়া।
এই দিন অপরাজিতা পূজাও হয়। দেবীপুরাণ থেকে জানা যায় দুর্গার আরেক নাম হল 'অপরাজিতা'। অর্থাৎ যার পরাজয় হয় না। যিনি চতুর্ভূজা। হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা; গায়ের রং নীল; ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিসর্জনের পর পূজামণ্ডপের ঈশানকোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতার লতা রেখে এই দেবীর পূজা করা হয়। পঞ্জিকা অনুসারে, এবার দেবীর দোলায় গমন। শাস্ত্র জানায়, এর ফল হবে মড়ক। ২০২০ সালে করোনা অতিমারির জের আজও বিশ্বে পরিব্যপ্ত।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে আগামী ১৫ অক্টোবর, ২৮ আশ্বিন, শুক্রবার শ্রী শ্রী বিজয়া দশমী। কুলচারানুসারে বিসর্জনান্তে শ্রী শ্রী অপরাজিতা পূজা। শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর দোলায় গমন। দশমী তিথি আরম্ভ, বাংলা– ২৭ আশ্বিন, বৃহস্পতিবার। সময়– সন্ধ্যা ৬টা ৫৪ মিনিট। দশমী তিথি শেষ, বাংলা– ২৮ আশ্বিন, শুক্রবার। সময়– সন্ধ্যা ৬টা ০৩ মিনিট। সকাল ৯টা ২৭ মধ্যে কিন্তু বারবেলানুরোধে সকাল ০৮ টা ২৯ মিনিট মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও বিসর্জন প্রশস্তা। শ্রী শ্রী বিজয়া দশমী কৃত্য, কুলচারানুসারে বিসর্জনান্তে শ্রী শ্রী অপরাজিতা পূজা।
এই দশমীর সঙ্গে যোগ রয়েছে নীলকণ্ঠ পাখিরও। অনেক বাড়িতে এ দিন নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার প্রথা রয়েছে। যদিও এই পাখি রাখা বেআইনি। তবে নিয়ম মেনে যেমন শোভাবাজার রাজবাড়িতে মাটির নীলকন্ঠ পাখি বানিয়ে তা বিসর্জন দেওয়া হয়। শিবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ। নীল বর্ণের জন্য নীলকণ্ঠ পাখিকে শিবের অংশ বলে মনে করা হয় হিন্দু ধর্মে। শাস্ত্র মতে প্রথা যে নীলকণ্ঠ পাখি আগে কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে পার্বতীর আগমন বার্তা দেবে।
শরতের নীল আকাশ, রামায়ণে উল্লিখিত দেবী দুর্গার আরাধনায় রামের ১০৮টি 'নীলপদ্ম' দান কিংবা নীলকণ্ঠ পাখি, দেবী দুর্গার সঙ্গে নীল রঙের যোগ এক অন্য গল্প বলে। উমাকে বিদায়ের দিনে বাঙালি মনও ব্যথায় নীল হয় বৈকি!