কলকাতা: এক এক করে পাঁচ। বিদেশের মাটিতে বাঙালির সেরা উৎসবের পাঁচ বছরে পা। বিলেতে যেন একটুকরো বাংলা। কলকাতা বা অন্য জেলায় যেমন থিমের মন্ডপ তৈরি করে পুজো হয়- ঠিক সেরকমই একটি পুজো হয় বিলেতের মাটিতেও। আয়োজনে Adda Slough
UK-তে আড্ডার হাত ধরেই প্রথম থিম নির্ভর দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) শুরু হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে এর পথচলা। এবারও পঞ্জিকা মেনেই পুজো হচ্ছে- ২০ অক্টোবর-২৩ অক্টোবর। আর থাকছে Gate of Joy.. সেটা কী? তা জানার আগে একঝলকে জেনে নেওয়া যা এই আয়োজকদের বিষয়ে।
সালটা ২০১৩, লন্ডনের (London) পশ্চিম শহরতলি স্লাউতে জনা পাঁচেক প্রবাসী বাঙালির হাত ধরে শুরু হয় এই সংগঠনের। বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং প্রবাসী বাঙালিদের কথা ভেবেই এর পথচলা শুরু। আর বাঙালির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে দুটি বিষয়- পুজো এবং আড্ডা। ২০১৩ সালেরই Adda প্রথম সরস্বতী পুজো করে, ২০১৬ সালে শুরু করে কালীপুজো, আর ২০১৯ সালে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা।
আড্ডার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ গেট অফ জয়। পুজোকে কেন্দ্র করে বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ইতিহাস তুলে ধরতেই এমন ভাবনা। এর আগে বাংলার নানা কোণের নানা টুকরো প্রথা-সংস্কৃতির ছোঁয়া এখানে লেগেছিল। বর্ধমানের কাঠের পুতুল, নয়াগ্রামের পটচিত্র, কুশমন্ডির বাঁশের কাজ ও মুখোশ, পুরুলিয়ার ছৌ নাচের মুখোশে সেজেছে আড্ডার গেট অফ জয়। এবার রয়েছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। গোটা বাংলা তো বটেই, সারা দেশ এমনকী বিশ্বের অন্যত্রও চন্দননগরের আলোকসজ্জার নাম রয়েছে। এবার আড্ডার গেট অফ জয়ে - জায়গা পেয়েছে সেটাই। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। চন্দননগরের আলোকশিল্পী অমিত শা-এর হাতে চলছে তারই প্রস্তুতি। শুধু বাংলাই নয়, আড্ডার মন্ডপে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের নানা বিষয়ও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া বাঙালির পুজো অসম্পূর্ণ। আড্ডা- বরাবরই খাবারের বিষয়ে নজর রাখে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বাংলা এবং ভারতের নানা জনপ্রিয় পদের স্টল থাকছে এখানে। থাকছে বাংলাদেশে নানা লোভনীয় খাবারও। এর আগের বছরগুলোতেও বড় করে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান করেছে আড্ডা। একাধিক বাংলা ব্যান্ড এবং বাংলার শিল্পীরা অনুষ্ঠান করেছেন। এবার আড্ডার বিজয়া অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অনুপম রায় ও ব্যান্ড। ৪ নভেম্বর হবে সেই অনুষ্ঠান।
ছোট-বড় সবার কাছেই পুজোর মেলা অত্যন্ত পছন্দের। ইদানিং বাংলার মেলার ধারণা ছোটদের কাছে ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। সেই স্রোতের উল্টোদিকে হাঁটছেন আড্ডার পুজো উদ্যোক্তারা। শিশুদের জন্য থাকছে বাংলা গ্রামীণ মেলা। মিলবে চড়কি নাগরদোলা, রকমারি ভাজা। ইংল্যান্ডের মাটিতে এমন আয়োজনের ভাবনা কেন? আড্ডা পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য বলছেন, 'অন্যপুজোগুলি কমিউনিটি হলে হয়। আমাদের স্লাউ ক্রিকেট ক্লাবে (Slough Cricket Club) মাঠ আমরা পুজোর জন্য পাই। ফলে আমরা অনেকটাই বড় জায়গা পাই। এখানে অনেকেই আসেন তাঁরা বাচ্চাদের নিয়ে আসেন। বাচ্চারা যাতে মজা পায়, তাদের মতো করে আনন্দ করতে পারে সেই কথা ভেবেই নাগরদোলা-আরও কিছুর ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় ডিলারদের দিয়েই ব্যবস্থা করা হয়।'
বিদেশের মাটিতে পঞ্জিকা মেনে পুজো করা বেশ কঠিন। সেটার ব্যবস্থাও করেছেন আয়োজকরা। অন্যতম উদ্যোক্তা প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, বিদেশে ঠিকমতো পঞ্জিকা মেনে পুজো করা বেশ কঠিন। পুরোপুরি পঞ্জিকা মেনে করাও যায় না। তাই পুজোর সবচেয়ে কাছাকাছি উইক এন্ড যেটা হয় সেটা মেনেই পুজো করা হয়। স্লাউ-এর বাঙালিদের মধ্যেই একজন সম্রাট চক্রবর্তী। তিনি পেশায় একজন সফটঅয়্যার আর্কিটেক্ট। আড্ডা স্লাউ-তে তাঁর হাতেই এবার পূজিতা হবেন দেবী দুর্গা। বাঙালির সেরা উৎসব ঘিরে কয়েকদিনের জন্য হলেও লন্ডনের পশ্চিমের এই শহরতলি যেন হয়ে উঠবে একটুকরো বাংলা।
আরও পড়ুন: শিব ভাবনায় সেজে উঠছে পুজোমন্ডপ! আহিরীটোলায় এবার সোমনাথ মন্দির