বেঙ্গালুরু: বাঙালি মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে এর মধ্যে দুর্গাপুজোর ব্যাপার বেশ কিছুটা আলাদা। বছরের এই সময়টাই যদি চিকিৎসার জন্য কোনও বাঙালিকে ঘরদোর ছেড়ে বাইরে কাটাতে হয়, তা হলে কেমন হয়? বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরেছেন বেঙ্গালুরুর ওল্ড এয়ারপোর্ট রোডের মণিপাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই তাঁদের প্রথম বার সর্বজনীন শারদীয়া দুর্গোৎসবের ভাবনা।


উৎসব থেকে দূরে নয়...
পশ্চিমবঙ্গ থেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা পুজোর সময়টা উৎসবের মেজাজ 'মিস' করবেন, এটা মানতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট অজিত কুমার রায় যেমন বললেন, 'আমাদের পরিষেবা লাগছে মানেই রোগীদের দুর্গাপুজো মিস করতে হবে, এর কোনও মানে নেই। রোগীরা এর জন্য আমাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।' এক সুর হাসপাতালেরই ইন্টারনাল মেডিসিনের কনসালটেন্ট চিকিৎসক সোমনাথ মিত্রের কথায়। বললেন, 'স্রেফ মেডিক্যাল চিকিৎসার উপর ওঁদের ভাল থাকা নির্ভর করে না। রোগীদের সব সময় পাশে রয়েছি আমরা।' বাস্তবিক। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুজো উদযাপনের ব্যাপারে একমত না হলে বেঙ্গালুরুর  স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে দুর্গাপুজোর ছবি হয়তো কখনওই দেখা হত না। সঙ্গে এও দেখা যেত না যে তীব্র শারীরিক কষ্ট সত্ত্বেও দেবীপ্রতিমার সামনে কত মানুষ হাত জোড় করে রয়েছেন। চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। কে বলে উৎসবের দেশ-কাল-গন্ডি রয়েছে? কয়েকটা দিন তাঁদের ভাল থাকতে দেখে রোগী পরিজনেরাও যেন বেশ কিছুটা গ্লানি ভূুলেছিলেন। শুধু তাই নয়। এভাবে এক স্বাস্থ্য় প্রতিষ্ঠানে দুর্গাপুজোর আয়োজন দেখে তাতে যোগ দিতে এগিয়ে আসেন আশপাশের বাসিন্দা বহু বাঙালি। সকলে মিলে মাতৃমূর্তির সামনে প্রার্থনা করেন। চিকিৎসাধীনদের আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করেন তাঁরাও। পাঁচ দিনের উৎসবে চেনা-অচেনার সীমা কোথায় যেন মুছে যায়। 



সংস্কৃতির সঙ্গে...
অসুস্থতা, শারীরিক যন্ত্রণা ও সময়সাপেক্ষ চিকিৎসা বহু সময়ই তরতাজা মনকেও আচ্ছন্ন করে ফেলে। উৎসব সেই বিষণ্ণতা কাটাতে কার্যকরী। এক্ষেত্রে সে কথাই ভেবেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু সে জন্য তাঁর মনের দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। বাড়িতে না হলেও প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও যদি দুর্গাপুজোর আমেজটুকু পাওয়া যায়, তা হলেও হয়তো কিছুটা আনন্দে থাকবেন রোগীরা, এইটাই ছিল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য ছুঁয়েই  আনন্দের উদযাপন।


আরও পড়ুন:উৎসবের মরশুমে দারুণ উপহার পেলেন রেলের কর্মীরা! ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা