তেহরান: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির। ঘন কুয়াশায় হেলিকপ্টারটি পার্বত্য এলাকায় ভেঙে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ। তবে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিতর্কিত চরিত্র রইসির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে বিশ্ব বাণিজ্য, সর্বত্রই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। (Ebrahim Raisi Death Impact)


রবিবার আজেরবাইজান সীমান্ত থেকে ফেরার পথে ভেঙে পড়ে রইসির কপ্টার। সোমবার সিলমোহর পড়ে তাঁর মৃত্যুর খবরে। রইসি, তাঁর বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির আবদোল্লাহিয়ান-সহ পূর্ব আজেরবাইজানের গভর্নর মালিক রহমতি, পূর্ব আজেরবাইজানের ইমাম আলি আলে-হাশেম এবং আরও বেশ কয়েক জনও মারা গিয়েছেন এই দুর্ঘটনায়। রইসির মৃত্যুতে সোশ্যাল শোকপ্রকাশ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা। রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষিত হয়েছে। সেই আবহেই বিশ্ব বাজারে সঙ্কটের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। (Iran Political Situation)


আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম


ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে তেলের দামে ওঠাপড়া দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রইসির মৃত্যুতে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে ইরান। আপাতত দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার হাতে নিয়েছেন মহম্মদ মোখবর। আর এই ক্ষমতার হাতবদল চলাকালীন ইরানের তেল উৎপাদন এবং রফতানিতে প্রভাব পড়তে পারে। ইতিমধ্যে তার ইঙ্গিতও মিলেছে। রইসির কপ্টার দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার পরই সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে তেলের দাম চড়তে শুরু করে। তাই ইরান থেকে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে, তেলের দাম আকাশ ছোঁবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


সোনার দর এবং শেয়ার বাজার


সোনার দর এবং শেয়ার বাজার নিয়েও অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা কিনতে আগ্রহী হয়ে পড়েন অনেকে, তাতে সোনার দাম চড়তে শুরু করে।  প্রায়শই সোনার চাহিদা রইসির কপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পরই সোমবার সোনার দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে। ভারতের বাজারে আজ প্রতি ভরিতে ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ৭৫ হাজার ১৬০ টাকায় এসে পৌঁছয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম একলাফে বেড়ে গিয়েছে।


ইন্দো-ইরান সম্পর্ক


রইসির মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের উপরও প্রভাব পড়তে পারে। আরও ১০ বছরের জন্য ইরানের সঙ্গে সম্প্রতি চবাহার বন্দর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। সেই নিয়ে ভারতকে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকা। আবার ইরানের ঘোষিত ‘শত্রু’ ইজরায়েলকে নিয়ে ভারতের অবস্থানের দিকেও নজর রয়েছে সকলের। রইসির মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারত। আগামী দিনে ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে নজর রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের।


পশ্চিম এশিয়ার সমীকরণ


গত বছর ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে, প্যালেস্তাইনের পক্ষ নিয়েছিল ইরান। সেই কারণে নয়া মাত্রা পায় ইরান-ইজরায়েল সংঘাত। সিরিয়ায় ইজরায়েলের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইজরায়েল। এর পাল্টা আবার ইজরায়েলের উদ্দেশে রকেট ছোড়া হয় তেহরান থেকে। হামাস এবং লেবাননের হেজবোল্লাকে ইরানই অস্ত্রশস্ত্র জুগিয়ে সাহায্য করছিল বলে সামনে আসে। রইসির মৃত্যুতে সেই সমীকরণেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। পাশাপাশি, সৌদি আরব এবং আমেরিকার সঙ্গেও ইরানের সম্পর্ক কোন খাতে বয়, সেদিকেও তাকিয়ে সকলে।


দেশীয় রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থা


তবে রইসির মৃত্যুতে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন মোখবর। ৫০ দিনের মধ্যে অথবা তার আগেই নতুন করে নির্বাচন করাতে হবে দেশে। তবে গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে বার বার সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন রইসি। পাশাপাশি, তাঁর রক্ষণশীল এবং কট্টরপন্থী অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। মোখবরের হাতে কোনও পরিবর্তন ঘটে কি না, তা দেখতে উৎসুক দেশের মানুষও।