সৌভিক মজুমদার, কৃষ্ণেনদু অধিকারী ও প্রকাশ সিন্হা, এগরা : এগরার ভয়াবহ বিস্ফোরণকাণ্ডে পুলিশ যে মামলা করেছে, তাতে বিস্ফোরক আইনের কোনও ধারাই নেই। যা দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, NIA এড়াতেই কি এই কৌশল? কারণ, বিস্ফোরক আইনে মামলা হলে, কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি সেই তদন্তভার NIA-কে দিতে পারে। এক্ষেত্রে যাতে তা না হয়, সেজন্য়ই কি বিস্ফোরক আইনে মামলা করেনি পুলিশ? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
বীভৎস বিস্ফোরণ, যাতে মৃত্য়ু হয়েছে ৮ জনের! এবিপি আনন্দর ড্রোন ক্য়ামেরার ছবিতেও স্পষ্ট ধরা পড়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা কতটা মারাত্মক ছিল। ছারখার হয়ে গেছে গোটা একটা কারখানা! ১০ ফুটেরও বেশি দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েছে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ। গোপন কুঠুরিতে মিলেছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। ঘটনাস্থলে গেছে বম্ব স্কোয়াড। কিন্তু, তারপরও এই ঘটনায় ভানু বাগ, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তাতে কোথাও নেই বিস্ফোরক আইনের কোনও ধারা। দেওয়া হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী অনিচ্ছাকৃত খুন, পুলিশের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করা, বিস্ফোরক পদার্থের ব্যাপারে অবহেলামূলক আচরণের মতো লঘু ধারা! পাশাপাশি রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্য়াক্টের ২৪ ও ২৬ নম্বর ধারা। কিন্তু, নেই বিস্ফোরক আইনে একটাও ধারা, যা দেখে বিস্মিত অনেকেই! তাদের প্রশ্ন, এটা কি পুলিশ-প্রশাসনের কৌশল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরক আইন, অস্ত্র আইন বা UAPA-তে মামলা হলে রাজ্য় সরকারকে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হয়। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার মনে করলে, রাজ্য় সরকারের থেকে তদন্তভার নিয়ে NIA-কে দিতে পারে। কিন্তু, এসব আইনে মামলা না থাকলে, কেন্দ্র সরাসরি তদন্তভার হস্তান্তরিত করতে পারে না। সেক্ষেত্রে আদালতের ওপর নির্ভর করতে হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, এগরার বিস্ফোরণকাণ্ডে ভেবেচিন্তেই কি বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেনি পুলিশ? কেন্দ্র যাতে সরাসরি NIA-কে তদন্তভার দিতে না পারে, সেজন্য়ই কি এই কৌশল? আইনজীবী শ্য়ামলকুমার ঘোষ বললেন, ' যিনি FIR করেছেন, তিনি জেনেবুঝে করেছেন বা অজ্ঞ। জানেন না কীভাবে করতে হয়। খাগড়াগড়ে দুজন মারা গেছিল, তাতে বিস্ফোরক আইন ছিল। এখানে বেশি তীব্রতা। তাতেও দেয়নি। যাতে NIA সরাসরি নিতে পারবে না ' মঙ্গলবার এই বিস্ফোরণের পরই, NIA তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী।
পুলিশের মামলায় কেন নেই বিস্ফোরক আইনের ধারা? পুরোটাই আইওয়াশ? প্রশ্ন বিরোধীদের । এর আগে রামনবমীর অশান্তির মামলাতেও পুলিশ একইভাবে বিস্ফোরক আইনের ধারা দেয়নি! এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হলে, তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ে পুলিশ। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে,
রাজ্য পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেনি?
তদন্তভার কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে চলে যেতে পারে, এই ভয়েই কি বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেনি পুলিশ? এরপর রামনবমীর অশান্তির মামলায় NIA তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এগরার বিস্ফোরণকাণ্ডে NIA তদন্তের দাবিতে বুধবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন :