নয়াদিল্লি: যুদ্ধ শুধু হতাহত, ক্ষয়ক্ষতিই বয়ে আনে না, বয়ে আনে মানবিক সঙ্কটও। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধও ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কট ডেকে এনেছে এই মুহূর্তে। শিশু, মহিলা-সহ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ইতিমধ্যেই। আহতের সংখ্যাও তরতর করে বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর তাঁদের নিয়েই ফাঁপরে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহল। এত সংখ্যক শরণার্থী কোথায় ঠাঁই পাবেন, মুখে মুখে ফিরছে এই প্রশ্নই। (Israel Palestine War)


প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই হাত তুলে নিয়েছে গাজা এবং ওয়েস্টব্যাঙ্ক সীমান্ত লাগোয়া দুই দেশ, মিশর এবং জর্ডান। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফতে এল-সিসি বুধবার সাফ জানিয়ে দেন, তাঁদের দেশে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জায়গা নেই আর। ইচ্ছাকৃত ভাবে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের তাঁদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও, আসলে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াই ইজরায়েলের লক্ষ্য বলে অভিযোগ সিসির। এতে আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাঁর। (Israel Palestine Conflict)


একই সুর ধরা পড়েছে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লার কথাতেও। বুধবার তিনি বলেন, “শরণার্থী নেবে না জর্ডান, শরণার্থী নেবে না মিশরও।” মিশর এবং জর্ডানের এই অপারগতার নেপথ্যে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাঁদের মতে, মিশর এবং জর্ডান মনে করছে যে, এভাবে প্যালেস্তাইনদের খেদিয়ে দিয়ে আসলে স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের দাবিকেই নির্মূল করে দিতে চাইছে ইজরায়েল।


এর পাশাপাশি, গাজা এবং ওয়েস্টব্যাঙ্ক থেকে দলে দলে শরণার্থী ভিড় করতে শুরু করলে, নিরীহ নাগরিকদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী এবং উগ্রপন্থীরাও ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে মিশর এবং জর্ডান। সেখানে থেকে তাঁরা ফের ইজরায়েলের উদ্দেশে হামলা চালালে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিশর এবং জর্ডানকে তাতে নাম লেখাতে হবে এবং চারদশক পুরনো শান্তি চুক্তি তাতে লঙ্ঘিত হবে।


আরও পড়ুন: Israel Palestine War: আদর্শগত ভাবে হামাসের থেকে আলাদা, গাজা বিস্ফোরণে Islamic Jihad-কে দায়ী করছে ইজরায়েল


ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, এমন শরণার্থী সঙ্কট এই প্রথম নয়। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল তৈরি হওয়ার পর প্রায় ৭ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় রাতারাতি শরণার্থীতে পরিণত হন। নিজের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হন অনেকে, অনেকে আবার প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নেন। ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা দখল করলে, সেবার ৩ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় রাতারাতি শরণার্থীতে পরিণত হন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ আশ্রয় নেন জর্ডানে।


ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, গাজা, লেবানন, সিরিয়া এবং জর্ডানে এই মুহূর্তে প্যালেস্তিনীর শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ লক্ষের বেশি। উপসাগরীয় এবং পশ্চিমি দেশগুলিতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছেন বহু প্যালেস্তিনীয়। প্যালেস্তিনীয়দের জমি দখল করলেও, প্যালেস্তিনীয়দের গ্রহণ করতে নারাজ ইজরায়েল। তাদের দাবি, প্যালেস্তিনীয়রা ফিরলে ইজরায়েলের ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হবে। তাই পড়শি দেশগুলির ভয়, এখন আশ্রয় দিলে আর ফিরে যাবেন না প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীরা। পাকাপাকি ভাবে থেকে যাবেন। (Israel Palestine War)


তবে মিশর এবং জর্ডান হাত তুলে নিলেও, প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফের স্ত্রী প্যালেস্তিনীয়। গাজায় তাঁর পরিবার রয়েছে। ভিডিও বার্তায় ইউসুফ বলেন, “অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে নড়তে চাইছেন না। ছেড়ে বেরিয়ে আসাও উচিত নয়। কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, যাঁরা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চান, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। গোটা বিশ্বকে এর দায় নিতে হবে।” পশ্চিম এশিয়া, এশিয়া, ইউরোজ, ব্রিটেন এবং আমেরিকার মতো দেশকে দ্বার অবারিত রাখতে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, “উদারতা এবং সহানুভূতিকে সামনে রেখে স্কটল্যান্ড শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে। গাজার মানুষের পাশে থাকতে হবে এই মুহূর্তে।”


স্কটল্যান্ডের দেখাদেখি বাকি ব্রিটেনও সেই পথে হাঁটতে পারে বলে জানান ইউসুফ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধে ইজরায়েলকে সমর্থন করলেও, দেশের অন্দরে গাজার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করেছে। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান, দুই শিবির থেকেও এমন দাবি উঠছে।