নয়াদিল্লি: আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করায় আপত্তি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। বরং গোটা বিষয়টি সম্মতি-নির্ভর হওয়া উচিত বলে মত তাদের। সেই মর্মে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন ঘটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক কমিশনের আইন সংশোধনের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে বলে খবর। সুপ্রিম কোর্টে যেহেতু তেমন কোনও নির্দেশ দেয়নি, তাই আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়েছে। (Aadhaar Card Data)


কমিশনের প্রস্তাব খারিজ করে কেন্দ্র জানিয়েছে, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেই সাফাই দিতে হবে। নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানাতে হবে, আধারের তথ্য প্রদান করবেন, না করবেন না, তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নাগরিকদের। আধার কার্ডের তথ্য না দিলে কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে না। ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আধার কার্ডের তথ্য দিতেই হবে, এমনটাও বাধ্যতামূলক নয়। (Election Commission)


আধার এবং ভোটারের সংযুক্তিকরণ এবং ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে আধার কার্ডের তথ্যা প্রদান নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলাও জমা পড়ে সম্প্রতি, যাতে আবেদনকারী জানান, ভোটার কার্ডে নাম তোলার যে ফর্ম ৬ এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকা নাগরিকদের আধার তথ্য় সংযুক্তির যে ফর্ম ৬বি রয়েছে, এবং আরও বেশ কিছু ফর্মে আধার তথ্য না দেওয়া, বা নিজের মতামত জানানোর উপায় নেই। শুধু মাত্র আধার কার্ডের নম্বর লেখার জায়গা রয়েছে ফর্মে এবং আধার নেই বলে জানানোর জায়গা রয়েছে।


আরও পড়ুন: PM Selfie With Nazim:'কাশ্মীরের মধু বিপ্লব এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন', নাজিমের সঙ্গে কথাবার্তায় আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী! পোস্ট সেলফি


তাই আধার কার্ডের তথ্য দিতে আপত্তি যাঁদের, আধার নেই বলে ফর্মে মিথ্যে কথা লিখতে হয় তাঁদের, যা ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গত বছর শীর্ষ আদালতে সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে কমিশন। তারা জানায়, ভোটার কার্ডের জন্য আধার মোটেই বাধ্যতামূলক নয়। সেই মর্মে সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি, ভোটার কার্ডের আবেদনপত্রে সংশোধন ঘটানোর বিষয়টিও দেখতে বলে আদালত। 



সেই নির্দেশ অনুযায়ীই ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন ঘটানোর প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রের কাছে যায় কমিশন। কিন্তু আইন সংশোধনে রাজি নয় কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলাও হয়। নির্দেশ সত্ত্বেও ভোটার কার্ডের আবেদনপত্রে সংশোধন ঘটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন আবেদনকারী। যদিও সেই মামলা গৃহীত হয়নি আদালতে। কারণ কমিশন জানায়, বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে। 


মাস  দুয়েক আগে কমিশনের তরফে এ নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের 23 (6), 28 (2) (hhhb) ধারায় সংশোধন ঘটানোর আর্জি জানানো হয়, যাতে বলা রয়েছে, আধার কার্ডের জন্য কারও ভোটার কার্ড বাতিল করা যাবে না। কিন্তু কেন আধার তথ্য নেই, তার যথেষ্ট কারণ দেখাতে হবে নাগরিককে। এই 'যথেষ্ট কারণ' শব্দ দু'টি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে কমিশন। একই ভাবে ফর্ম ৬ নিয়ে ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলার ক্ষেত্রে আধার তথ্যের জায়গাটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ জানায়, যাতে যাঁদের আধার নিয়ে কাউকে মিথ্যে বলতে না হয়। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি কেন্দ্র। 


২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আধার এবং ভোটার সংযুক্তিকরণে উদ্যোগী হয় কমিশন। সেই সময় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এইচ এস ব্রহ্মা। কিন্তু সে বছর অগাস্টেই গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। কারণ সুপ্রিম কোর্ট LPG, কেরোসিন এবং পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে আধারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তত দিনে দেশের ৩৮ কোটি নাগরিকের আধার এবং ভোটার সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে।


২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানায়, গোপনীয়তা র৭া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যদিও, কিন্তু কোনও আইন যদি আধার তথ্য সংগ্রহকে বৈধতা দিয়ে থাকে এবং তার সঙ্গে দেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারে রাশ টানা যায়। এর পর, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে আধার তথ্য ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় সাফাই অভিযান চালানোর আবেদন জানায় কমিশব। ২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে সংসদে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে সংশোধন ঘটানোর বিল পাস করে নরেন্দ্র মোদি সরকার। সেই মতো ফর্ম ৬বি মারফত আধার তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে কমিশন, যেখানে না চাইলে আধার তথ্য দিতে হতো না।  ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬৬ কোটি ২৩ লক্ষ মানুষের আধার তথ্য সংগ্রহ করেছে কমিশন, যা দেশের মোট ভোটদাতাদের ৯৬.৯৯ শতাংশ। আধার এবং ভোটার সংযুক্তিকরণের জন্য ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।