নয়াদিল্লি: লোকসভা থেকে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ভূরি ভূরি অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। আর সেই আবহেই দেশের নির্বাচন পরিচালনা বিধি পাল্টে গেল। নির্বাচন সংক্রান্ত বৈদ্যুতিন নথি, বিশেষ করে ভিডিও ফুটেজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রাখতে আইন পরিবর্তন করল কেন্দ্রীয় সরকার। (Election Conduct Rules Changed)


১৯৬১ সালের ৯৩(২) (এ) আইন অনুযায়ী, এতদিন নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাধারণ মানুষের দেখার অধিকার ছিল। নয়া আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু নথিই দেখার অধিকার পাবেন দেশের সাধারণ মানুষ।  শুক্রবার পুরনো ওই আইন সংশোধন করে নয়া বিধি আনল কেন্দ্রের আইন মন্ত্রক, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। (Election Commission)


এ বছর হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ভূরি ভূরি অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে। বুথে বুথে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। আদালতেও পৌঁছয় বিষয়টি। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সেই নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ নির্দেশ দেয়। নির্বাচন চলাকালীন একটি বুথের ভিডিও ফুটেজ, সিকিওরিটি ফুটেজ এবং সেখানে মোট কত ভোট পড়েছিল, তা জমা দিতে বলা হয় নির্বাচন কমিশনকে। আর তার ঠিক পরই নির্বাচন পরিচালনা বিধি পাল্টানো হল। 


নয়া বিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত সব নথি সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। বুথের সিসিটিভি ফুটেজ, ওয়েবকাস্টিং ফুটেজ, প্রার্থীদের ভিডিও রেকর্ডিং সেই তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে আর বুথের ভিতরের ভিডিও ফুটেজ দেখতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। নির্বাচন কমিশনের দাবি, নির্বাচন সংক্রান্ত নথিপত্রের অপব্যবহার রুখতেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে। 


নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, বুথের ভিতরের ফুটেজ কারও হাতে গেলে ভোটারদের পরিচয় আর গোপন থাকবে না। AI ব্যবহার করে বিকৃতও করা হতে পারে ওই ভিডিও ফুটেজ। নিয়মের দোহাই দিয়ে যে কেউ আর ওই সমস্ত নথি দেখার দাবি জানাতে পারবেন না বলে যুক্তি তাদের। তাদের দাবি, RTI-এর দোহাই দিয়েও বুথের ভিতরের ফুটেজ চেয়ে আবেদন জমা পড়ছিল এতদিন। 



কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশের পরই সাত তাড়াতাড়ি নির্বাচন পরিচালনা বিধি কেন পাল্টে ফেলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন  বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আমলে ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা যে ক্ষয়প্রাপ্ত, এটাই তার প্রমাণ'। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন জয়রাম। 




হাইকোর্টের নির্দেশের পরই আইন বদল নিয়ে আম আদমির প্রধান তথা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল লেখেন, 'বড় গন্ডগোল যে রয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে'। শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) নেতা আদিত্য ঠাকরের প্রশ্ন, 'আমাদের দেশে নির্বাচন কি সত্যইই স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ? কী লুকনো হচ্ছে আমাদের থেকে? কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী লুকোচ্ছে'?



'এক দেশ এক নির্বাচন' নীতি চালু করতে এই মুহূর্তে উদগ্রীব কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। আপাতত যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে সেই বিল, যা নিয়ে আগাগোড়া আপত্তি তুলে আসছেন বিরোধীরা। 'এক দেশ এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করে আসলে বিজেপি বিরোধীদের নিকেশ করে দিতে চাইছে বলে মত তাঁদের। সেই আবহেই নির্বাচন পরিচালনা বিধি সংশোধন ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।