নয়াদিল্লি: বিরোধীদের ওজর আপত্তির মধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নির্বাচন সংশোধনী বিল (Election Laws Amendment Bill)। এর আওতায় নাগরিকদের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্তিকরণে (Linking Aadhaar card to the voter I-card ) অনুমোদন মিলল সংসদের নিম্নকক্ষে (Lok Sabha)। কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি, ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করাই যখন লক্ষ্য সরকারে, এই বিল তার পক্ষে একেবারেই উপযুক্ত নয়। কারণ আধার হল দেশে বসবাসের প্রমাণপত্র। আর ভোটার কার্ড হল নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র। তাই নয়া বিলটি আইনে পরিণত হলে দেশের নাগরিক নন এমন মানুষও ভোটাধিকার পেয়ে যাবেন।


কংগ্রেসের (Congress) তরফে এই সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুর (Shashi Tharoor)। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এ দেশে বসবাসের প্রমাণপত্র হিসেবেই আধার আনা হয়েছিল। তা কখনওই নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। তাই ভোটারের আধার কার্ড চাওয়ার অর্থ তাঁর বসবাসের প্রমাণপত্র চাওয়া। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিক নন এমন মানুষকেও ভোটাধিকার পাইয়ে দিতে চাইছেন আপনারা।”


কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিও তারুরের সঙ্গে একমত। তাঁর কথায়, “ভোটদানের অধিকার নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ভোটার এবং আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ অন্যায়।”


বাংলায় বাম আমলে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুধুমাত্র সংখ্যার জোরে লোকসভায় নির্বাচন সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছে তাঁর দল তৃণমূলও (TMC)। সংশোধনী বিল এনে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ করেন দলের সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy)। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। আমি এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছি।”


কিন্তু বিরোধীদের এই আপত্তি ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে চায়নি কেন্দ্র। বরং ভিত্তিহীন দাবি করে তাঁরা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন বলে পাল্টা অভিযোগ ওঠে সরকারের তরফে।কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, “ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতেই সরকার এই পদক্ষেপ করছে। বিরোধীদের উচিত তাতে সমর্থন জানানো।”


এই তর্ক-বিতর্কে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভার সোমবারের অধিবেশন। সরকার বিরোধী ধ্বনি দিতে শুরু করেন বিরোধী শিবিরের সাংসদরা। তাতে দু’ঘণ্টার জন্য মুলতবি রাখতে হয় অধিবেশন। কিন্তু বিল পাশ হয়ে গেলেও, বিরোধীদের তরফে ক্ষোভ থামছে না। অল ইন্ডিয়া মসজিল-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির  (Asaduddin Owaisi)সাফ যুক্তি, “গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিতেই এই বিল আনা হয়েছে। এতে নাগরিকদের অধিকার খর্ব হবে। আধার কার্ডে ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রে তা ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এই বিল পাশ হলে দেশের একটা একটা বড় অংশের মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন।”