নয়াদিল্লি: সবে আমেরিকা সফর থেকে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তার পরই ভারতের জন্য আর্থিক সাহায্য বন্ধ করল আমেরিকা সরকার। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারে Department of Government Efficiency (DOGE) বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তিনিই ভারতের জন্য বরাদ্দ আর্থিক সাহায্য বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। উপমহাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে এতদিন এই অনুদান দিয়ে এসেছে আমেরিকা। ট্রাম্প এবং মাস্ক সেই অনুদান বাতিল করলেন। (US Funds for India)


DOGE জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এতদিন আমেরিকা ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিচ্ছিল, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৮২ কোটি টাকা। বেশি সংখ্যক ভারতীয় ভোটার যাতে বুথে ভোট দিতে যান, ভোটদান নিয়ে সচেতন হন, সেই কাজেই খরচ হতো ওই টাকা। বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ২৫১ কোটি টাকাও বাতিল করেছে DOGE. (Elon Musk DOGE)


অন্য দেশকে কোটি কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার পরিবর্তে, আমেরিকার করদাতাদের টাকা নিজেদের দেশের উন্নতিতে কাজে লাগানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এভাবে অন্য দেশকে অনুদান দিতে গেলে আমেরিকা দেউলিয়া হয়ে যাবে, বাজেটে কুলিয়ে উঠতে পারবে না বলে আগেই জানিয়েছিলেন ইলন। 


অতি সম্প্রতিই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন মোদি। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সময় অনুদান বাতিলের প্রসঙ্গ ওঠেনি। কিন্তু সফর সেরে মোদি ফেরার পরই এই সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা।



এ নিয়ে বিজেপি-র অমিত মালব্যর বক্তব্য, ‘ভোটদানের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার? এটা অবশ্যই ভারতের নির্বাচনী বহিরাগত হস্তক্ষেপ। এতে কে লাভবান হয়েছে? নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, শাসকদল লাভবান হয়নি’। মালব্য সরাসরি কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, 'কংগ্রেস এবং গাঁধীদের সঙ্গে সোরোসের সংযোগের কথা সর্বজনবিদিত। আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর ওঁর (সোরোস) ছায়া পড়ছে'।"


২০১২ সালে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন এবং The International Foundation for Electoral Systems-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত মউ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মালব্য। সোরোসের Open Society Foundation-এর সঙ্গে The International Foundation for Electoral Systems-এর সংযোগ তুলে ধরেন তিনি। আমেরিকা সরকারের বিদেশি অনুদান ওই সংস্থায় ঢুকত বলে দাবি করেছেন মালব্য। এখন যাঁরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার দাবিতে সরব, তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন। যে বিদেশি অনুদানের কথা উল্লেখ করেছেন মালব্য, তা শুধুমাত্র ভারতের জন্যই বরাদ্দ নয়। বৈশ্বিক উন্নয়ন, মানবিক ত্রাণ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির খাতে বিভিন্ন দেশকে ওই সাহায্য় দিয়ে আসছিল আমেরিকা। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্যও বরাদ্দ করা হতো মোটা টাকা। 


কিন্তু মালব্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেও, মোদি সরকারের আমলে চালু হওয়া 'স্বচ্ছ ভারত অভিযানে'ও আমেরিকার অনুদান রয়েছে। সেই মর্মে ভারতের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত হয়। ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া এবং স্বচ্ছ পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়। শিশুস্বাস্থ্য, ডিজিটাল উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, স্বল্প মূল্যে HIV প্রতিরোধী ওষুধের জোগানেও আমেরিকার অনুদান আসত এতদিন। সেই অনুদানও আপাতত বন্ধ রেখেছেন ট্রাম্প। ৯০ দিন সময় নিয়েছেন সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখার জন্য।


দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে ইলনকে ভরসা করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পকে জেতাতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি ইলনও। প্রচারে নিজের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন তিনি।  ক্ষমতায় এসে সরকারে তাই ইলনকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। সরকারের খরচ বাঁচানোর দায়িত্ব দেন। করদাতাদের টাকা নিজেদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে জানান। ইলনের ভূয়সী প্রশংসাও করেন ট্রাম্প।