নয়াদিল্লি: ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গন্য হবে বলে দাবি শোনা যায় প্রায়শই। ভারতের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উল্টো কথা বলছে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের (ILO) দাবি, কর্মক্ষম ভারতীয় যুবসমাজের ৮৩ শতাংশই বেকার।  গত দুই দশকে দেশে মাধ্যমিক পাশ এবং উচ্চশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। (Unemployment in India)


ILO এবং ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভলপমেন্ট (IHD)-র তরফে ২০২৪ সালের ভারতীয় কর্মসংস্থান রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে ভারতে মাধ্যমিক পাশ এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বেকার যুবকের হার ছিল ৩৫.২ শতাংশ। ২০২২ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে ৬৫.৭ শতাংশ হয়েছে। (Unemployment Data)


সদ্য প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের শ্রমবাজারে আপাতবিরোধী উন্নতি চোখে পড়ছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় যুবসমাজের কর্মসংস্থান এবং কর্মহীনতায় উন্নতি চোখে পড়ে। অর্থনৈতিক সঙ্কটও কর্মসংস্থানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেভাবে। করোনার সময়ও তেমন কোনো বিরাট পরিবর্তন চোখে পড়েনি। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়েছে। 


আরও পড়ুন: Varun Gandhi: ‘যত চরম মূল্যই দিতে হোক না কেন...’, BJP-র টিকিট না পেয়ে পিলিভিটবাসীকে আবেগতাড়িত চিঠি বরুণের


বেকারত্বের হারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানে দুরাবস্থার কথাও তুলে ধরেছে ওই রিপোর্ট। বলা হয়েছে, নিজের জমিতে কৃষিকাজের বাইরে মজুরি নির্ভর কাজ করেন যাঁরা, তাতেও বড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। মহিলারা স্বনির্ভর হওয়ার দিয়ে ঝুঁকেছেন বেশি করে। বাড়িতে যে কাজ করেন তাঁরা, তার জন্য মজুরি পান না।  অভিজ্ঞদের যাও বা কাজের সুযোগ রয়েছে, যুবকদের সকর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন নেই। মজুরি এবং আয় লাগাতার কমছে। ২০২২ সালের নিরিখে স্বনির্ভরতাই ৫৫.৮ শতাংশের আয়ের উৎস। অস্থায়ী এবং স্থায়ী কর্মসংস্থানের হার যথাক্রমে ২২.৭ এবং ২১.৫ শতাংশ।


রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণের হার (রাজ্যের কর্মক্ষম জনসংখ্যা, যাঁরা সক্রিয় ভাবে শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত, চাকরি করেন বা চাকরি খুঁজছেন), কর্মরত জনসংখ্য়ার অনুপাত (প্রতি হাজার মানুষে যতজন কর্মরত) এবং বেকারত্বের হারে ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পতন দেখা দেয়। ২০১৯ সালের পর পরিস্থিতির উন্নতি চোখে পড়ে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচক বিষয়গুলিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। 


দেশের কর্মরত মানুষের ৯০ শতাংশই অংসগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। বলা হয়েছে, ২০০০ সালের পর থেকে স্থায়ী কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরি হলেও, ২০১৮ সালের পর থেকে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।  অতি অল্প সংখ্যক কর্মীরাই সামাজিক নিরাপত্তা পান, যাঁরা কৃষিক্ষেত্রের বাইরে সংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের মোট কর্মশক্তির ৮২ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত, ৯০ শতাংশ অস্থায়ী কর্মী।


স্থায়ী কাজের সুযোগের চেয়ে বর্তমানে ঠিকে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। শ্রমিকদের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যকই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় পড়েন না। ভারতের যুব কর্মশক্তি ভারতের অন্যতম শক্তি হলেও, কিন্তু অধিকাংশের মধ্যেই দক্ষতার অভাব রয়েছে। ৭৫ শতাংশ অ্যাটাচমেন্ট-সহ ইমেল পাঠাতে পারেন না, কপি-পেস্ট করে ফাইল পাঠাতে অক্ষম ৬০ শতাংশ, ৯০ শতাংশ স্প্রেডশিটে গাণিতিক ফর্মুলা বসাতে পারেন না।


কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, চাকরির গুণমানও যুবসমাজের বেকারত্বের জন্য অনেকাংশে দায়ী। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত যাঁরা, তাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন বেশি। কম বেতনের, অনিশ্চিত চাকরিতে যোগ দিতে আগ্রহী নন উচ্চশিক্ষিতরা। এর পরিবর্তে ভাল সুযোগের আশায় বাড়িতে বসে থাকতে আপত্তি নেই তাঁদের। একই কাজে পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কম বেতন পান মহিলারা। ভাল মানের চাকরি পাওয়ায় এখনও পিছিয়ে রয়েছেন তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতিরা। সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসার ঘটলেো, সমাজে শ্রেণি এবং জাতির বিভাজন আজও বিদ্যমান। 


রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যে বেকারত্ব চোখে পড়ছে। কিন্তু এই রিপোর্টকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন কেন্দ্রের যুবসমাজ  বিষয়ক মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর দাবি, ভারতীয় সংস্থার সমীক্ষাই সঠিক চিত্র তুলে ধরছে। ৬ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি মানুষ EPFO-তে নাম নথিভুক্ত করেছেন, যা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আরও অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ৩৪ কোটির বেশি মুদ্রা ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। চাকরিপ্রাপকরাই এখন চাকরিদাতা।