World Environment Day: পরনে স্থানীয় পোশাক, খালি পা, আতিশয্য-চাকচিক্যের লেশমাত্র নেই, দৃঢ়চেতা ভঙ্গিতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে চলেছেন বৃদ্ধা। পরের দৃশ্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে 'পদ্মশ্রী' (Padma Shree Award) পুরস্কার নিচ্ছেন তিনি। ২০২০ সালে এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ব্যাপক ভাবে। খুঁজলে আজও পাওয়া যাবে। যে বৃদ্ধাকে তখন হইচই শুরু হয়েছিল, তিনি তুলসী গৌড়া (Tulsi Gowda)। ফিল্মি কায়দায় বলাই যায় 'নাম তো শুনা হি হোগা...'। তুলসী গৌড়াকে চিনে না থাকলে, অন্তত আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জেনে নিন, চিনে নিন। 


ছয় দশকের বেশি সময় ধরে পরিবেশের জন্য কাজ করছেন তুলসী গৌড়া। গাছই তাঁর পরম বন্ধু। এতদিনে ৩০ হাজারের বেশি চারগাছ রোপণ করেছে তিনি। মাত্র দু'বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের হাত ধরে নার্সারিতে কাজ শুরু করেন তুলসী। সেই থেকেই গাছের প্রতি ভাললাগা, ভালবাসার অনুভূতির শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা বেড়েছে তাঁর। আজ অনেকেই তুলসী গৌড়াকে চেনেন Encyclopedia of Forests- এই খেতাবে। যেকোনও গাছ তা সে ভেষজ হোক বা অন্য কিছু- সব ক্ষেত্রেই অগাধ জ্ঞান রয়েছে কর্ণাটকের বাসিন্দা বৃদ্ধার। সেই সঙ্গে রয়েছে একটি বিশেষ গুণ। যেকোনও প্রজাতির গাছের ক্ষেত্রে Mother Tree চিনে নিতে পারেন তুলসী গৌড়া। 


খুব অল্প বয়স থেকেই গাছেদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন তুলসী। দরিদ্র পরিবারের কন্যা সন্তান, তায় পিতৃহারা, কিশোরী বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। ছোট থেকেই মায়ের সঙ্গে নার্সারিতে যাতায়াত ছিল তুলসীর। মাত্র ১২ বছর বয়সেই কর্ণাটকের হোনালি গ্রামের বাসিন্দা এই কন্যা স্থানীয় একটি নার্সারিতে কাজ শুরু করেছিল। পরবর্তী কালে সরকারি নার্সারিতে কাজ করতেন তিনি। ৩০ বছরের বেশি সময় এই সরকারি নার্সারিতে কাজ করেছে তুলসী। এরপর ভারতীয় বনদফতরে স্থায়ী চাকরি পান তিনি। ১৫ বছর সেখানে কর্মরত ছিলেন তিনি। বয়স ৬০ পেরোলেও ভলান্টিয়ার হিসেবে আরও ১০ বছর কাজ করার পর ৭০ বছর বয়সে বনদফতর থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর পদ্ম পুরস্কার পেয়েছিলেন তুলসী গৌড়া। 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার নিতে গিয়েই উপস্থিত সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধা। ট্র্যাডিশনাল পোশাকে একদম সাদামাঠা ভাবে হাজির হয়েছিলেন তুলসী গৌড়া। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গাছেদের জড়িয়ে থাকার সঙ্গে সঙ্গে মাটির কাছাকাছি থাকতেই ভালবাসেন তিনি। 


বয়স ৭০ পার হয়েছে। তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হননি তুলসী গৌড়া। বরং নতুন প্রজন্মকে প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রেরণা দেন তিনি। বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি গাছের সঠিকভাবে সংরক্ষণ করাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই বিগত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের কাজের মাধ্যমে বুঝিয়ে চলেছেন পরিবেশবিদ তুলসী গৌড়া। প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিনই আমরা বৃক্ষরোপণ, গাছ সংরক্ষণ নিয়ে প্রচুর আলোচনা করি। বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বছরভর পরিবেশের হিতে কাজ করেন তুলসী গৌড়ার মতো মানুষ। এত বছর ধরে নিরলস ভাবে পরিশ্রমের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে এই কাজে উৎসাহ প্রদানের কাজও করে চলেছেন তুলসী গৌড়া।