নয়াদিল্লি: চাকুরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ সামনে আসতে তোলপাড় হয় গোটা দেশ। পাঁচ বছর আগের সেই অভিযোগ যদিও অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার সেই সংক্রান্ত গোপন রিপোর্ট সামনে এল। ওই রিপোর্টে একাধিক নথি তুলে ধরা হয়েছে অনলাইন মাধ্যমে, যাতে বলা হয়েছে, Employees Provident Fund Organisation-এর কাছে মজুত দেশের কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সত্যিই বেহাত হয়ে গিয়েছিল। পরে একটি চিনা সাইবার সংস্থাকে দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়, ফিরিয়ে আনা হয় আগের অবস্থায়। পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকটিও নতুন করে সাজিয়ে দেয় ওই চিনা সংস্থা, যাতে সহজে কেউ তথ্য হাতিয়ে নিতে না পারে। (EPFO Data Breach)


একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হাতে ওই নথিসমূহ এসে পৌঁছেছে, যার উল্লেখ করেছে ABP Live Hindi-ও। চলতি সপ্তাহে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম Github-এ ওই গোপন রিপোর্ট সামনে এসেছে। ওই রিপোর্টে একাধিক চিনা সাইবার সংস্থার নাম উঠে এসেছে, যারা Common Service Centres (CSC)-এর নথির ভাণ্ডার থেকে কোটি কোটি চাকুরিজীবাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় এবং পরে সেই তথ্য একত্রিত করে নতুন করে নথি সাজানোর কাজটি সম্পন্ন করে বলে দাবি করা হয়েছে। সেই নিয়ে একদফা তদন্তও করে Indian Computer Emergency Response Team (Cert-In). (PMO Data Breach)


Github-এ সেই সংক্রান্ত একাধিক নথিও তুলে ধরা হয়েছে। যাতে দেখা গিয়েছে, সরকারি এবং বেসরকারি, দুই ক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মচারীদেরই ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে গিয়েছিল। শুধু EPFO-ই নয়, BSNL, Air India এবং Reliance গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যায় বলেও দাবি করা হয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের এক আধিকারিক এ নিয়ে মুখ খুলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তাঁর বক্তব্য, “Cert-In প্রাথমিক তদন্ত করে। তদন্তে দেখা যায়, নথিতে থাকা EPFO-র তথ্যসমূহ ২০১৮ সালের, যখন তা বেহাত হয়ে যায় সেই সময়ের।”


আরও পড়ুন: Elon Musk: বাছাই করা অ্যাকাউন্ট ও পোস্ট সরানোর নির্দেশ কেন্দ্রের, 'বাক স্বাধীনতা'র পরিপন্থী, বলল X


২০১৮ সালে কোটি কোটি মানুষের তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার খবর যখন সামনে আসে, সেই সময় অভিযোগ অস্বীকার করে EPFO. বলা হয়, “EPFO-র সফ্টওয়্যার বা সার্ভার থেকে কোনও তথ্য বেহাত হয়নি।” সেই সময় CSC-র সফ্টওয়্যারের দিকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। CSC যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে। EPFO থেকেই কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। তার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে এযাবৎ ধোঁয়াশাই জিইয়ে রাখা হয়। সরকারি ভাবে অভিযোগে সিলমোহর পড়েনি আজও।


তার পরও একাধিক বার তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। গত কয়েক বছরে একের পর এক সাইবার হানার অভিযোগ সামনে এসেছে, যার শিকার হয় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনসটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-ও (AIIMS)। ২০২২ সালে তাদের সার্ভারে হানা দিয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় সাইবার হানাদাররা, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দেয়। 


সিঙ্গাপুরের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা Cyfirma ২০২৩ সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়, সাইবার অপরাধের জগতে গোটা পৃথিবীর মধ্যে ভারতের উপরই সবচেয়ে বেশি আঘাত নেমে আসে। গোটা পৃথিবীতে যত সাইবার হানার ঘটনা ঘটে, তার ১৩.৭ শতাংশই ঘটে ভারতকে নিশানায় রেখে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা, ৯.৬ শতাংশ। তার পর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (৯.৩ শতাংশ) এবং চিন (৪.৫ শতাংশ)। সাইবার হানা রুখতে কেন্দ্রের তরফে বেশ কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাঙ্কিং, টেলিকম এবং শক্তিক্ষেত্রের নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে কেন্দ্র।