কলকাতা: গোটা বলিউডজুড়ে এখন একটাই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তা হল, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুরহস্য। দু'মাস হয়ে গেল সুশান্ত মারা গিয়েছেন। নিজের ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে তাঁর দেহ। সুশান্ত কি আত্মহত্যা করেছিলেন? কেউ কি তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্ররোচনা দিয়েছে? না কি কেউ তাঁকে খুন করেছে? এমন কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলে অভিনেতাকে অকালে চলে যেতে হল?



এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। একইসঙ্গে, অভিনেতার আর্থিক লেনদেনের দিকগুলি খতিয়ে দেখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সুশান্তের মৃত্যু রহস্যের সমাধান বা কোনও উত্তর জানতে হয়ত আরও কিছুটা সময় লাগবে। আর সেই উত্তর খোঁজার কাজে লেগে রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া তার নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে।

তবে, ব্যক্তি ও অভিনেতা সুশান্তের সম্পর্কে নানান অজানা কথা জানা গেল তাঁরই এক সহ-অভিনেতার কাছ থেকে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা মেজর রুদ্রাশিস মজুমদার। ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে সুপ্ত থাকা অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাকে পূরণ করতে যিনি সামরিক কেরিয়ার ছেড়ে সোজা বলিউডে পাড়ি দেন এবং তাঁর প্রথম ছবি 'ছিছোড়ে', সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে। ভূমিকা ছোট হলেও ছবিতে একই ফ্রেমে দুজনকে একাধিকবার দেখা গিয়েছে।

এবিপি আনন্দ ডিজিটালকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অভিনেতা সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা কথা জানিয়েছেন  রুদ্রাশিস, যা তিনি 'ছিছোড়ে' শ্যুটিংয়ের সেটে প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্যক্তি ও অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সম্পর্কে নানান কথা খোলসা করলেন। কেমন দেখেছেন ছবির প্রধান চরিত্র "অনিরুদ্ধ" ওরফে "অন্নি"কে? নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন অনিরুদ্ধের এইচ-৪ ব্যাচমেট "বগুলা ফ্রেশি"।



ছিছোড়ে ছবির একটি দৃশ্য। ডানদিক থেকে একেবারে প্রথম রুদ্রাশিস।


রুদ্রাশিস বললেন, "সুশান্তের সম্পর্কে কিছু বলতে হলে প্রথমেই বলতে হয়, নিজের কাজ প্রচণ্ড সিরিয়াস ছিলেন তিনি। অভিনয়ের বিষয়ে প্রচণ্ড মনোযোগ দিতেন।" তাঁর কথায়, শ্যুটিংয়ের ফাঁকে নিজের মতো করে থাকতে ভালবাসতেন সুশান্ত। একলা থাকলে বেশিরভাগ সময় বই পড়তেন। ব্রেক চলছে, সেই সময় চেয়ারে বসে এক মনে বই পড়তেন সুশান্ত। সুশান্ত মৃদুভাষী ছিলেন। তবে, এটা নয় যে কথা বলতেন না। ফ্লোরে হাসি-মজা সবই করতেন। এপ্রসঙ্গেই রুদ্রাশিস বলেন, "মিমিক্রি বা অন্যের নকল বেশ করতেন সুশান্ত। শাহরুখ খানের মিমিক্রি করতে ভালবাসতেন। মাঝেমধ্যে জোকস্ও শোনাতেন।"

সর্বদা হাসিখুশি থাকতেন সুশান্ত। তাঁর মধ্যে সর্বদা একটা পজিটিভ এনার্জি ছিল। শ্যুটিং ফ্লোরে সকলের সঙ্গেই ভাল ব্যবহার করতেন। কেউ হ্যালো করলেও তাঁকে ঠিক উত্তর দিতেন। ভীষই ডাউন টু আর্থ। দেখে মনেই হতো না কোনও তারকা। ভীষণই সাধারণ। প্রাক্তন সেনা অফিসারের কথায়, তবে একইসঙ্গে সুশান্তকে দেখে বা উনি কথা বললে বোঝা যেত, তাঁর মধ্যে কতটা জ্ঞান রয়েছে। এটা যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের অনুভূতি হবে।

এই প্রসঙ্গেই রুদ্রাশিস বলেন, "সুশান্তের থেকে কেউ কিছু জানতে চাইলে, এটা ফিডব্যাক পাওয়া যেত। অনেক বিষয়ে তিনি জানতেন। আর তেমন কোনও বিষয় যদি হত, যেটা তিনি জানতেন না, তা স্বীকার করে বলতেন, এটা আমি অতটা জানি না। বা দেখে বলব।" সহ অভিনেতা হিসেবে সুশান্তের থেকে অনেক কিছুই তিনি শিখেছেন বলে জানালেন রুদ্রাশিস। যেমন, কাজের প্রতি নিষ্ঠা। বললেন, ভাল মানুষ ছিলেন সুশান্ত।

রুদ্রাশিসের আফশোস একটাই। বললেন, "ভেবেছিলাম পরে কোনও সময়ে অভিনয় নিয়ে একদিন ওনার সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু, সেটা তো আর হবে না...।"