নয়াদিল্লি:  রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের (United Nations Security Council) মানসিকতা অনেকটা 'পুরোনো দিনের ক্লাব'-র (S Jaishankar On UNSC) মতো, মনে করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর মতে, নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যাওয়ার যাওয়ার ভয়ে নতুন কোনও রাষ্ট্রকে সদস্য হতে দিতে চায় না নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলি। বিদেশমন্ত্রীর সংযোজন, পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রগুলির সিদ্ধান্ত যাতে প্রশ্নের মুখে না পড়ে সেই জন্যই  এই ধরনের মানসিকতা। 


বিশদ...
রবিবার বেঙ্গালুরুতে একটি অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। বলেন, 'নিরাপত্ত পরিষদ অনেকটা পুরনো দিনের সাবেকি ক্লাবের মতো, যার সদস্যরা নিজেদের হাত থেকে লাগাম আলগা হতে দিতে চায় না। ক্লাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে চায়। নতুন সদস্য পেতে তারা আগ্রহী নয়। তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠুক, সেটাও চায় না।' দশকের পর দশক ধরে কোনও সংস্কার না হওয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জ যে তার গুরুত্ব হারাচ্ছে, সেটাকে 'ব্যর্থতা' বলেও মনে করেন বিদেশমন্ত্রী। জয়শঙ্করের কথায়, 'এটি মানবিক ব্যর্থতা। আজ তা গোটা বিশ্বের ক্ষতি করছে।' 
এর আগে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সমালোচনা শোনা গিয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে। জি-৭-র (G7)  মঞ্চ থেকে মোদি বলেছিলেন, বর্তমান বিশ্বের বাস্তব ছবি তুলে ধরতে না পারলে রাষ্ট্রপুঞ্জ ও নিরাপত্তা পরিষদ স্রেফ 'কথাসর্বস্ব' প্রতিষ্ঠান হয়ে থেকে যাবে। সঙ্গে প্রশ্ন ছিল, যেখানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল, সেখানে কেন এখনও এই নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য মঞ্চগুলিকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে? কার্যত এক সুর শোনা গেল বিদেশমন্ত্রীর কথায়। 


আর যা বললেন...
'আজ যদি জিজ্ঞাসা করেন, বিশ্বের ২০০টি দেশ সংস্কার চায় কি চায় না? সিংহভাগ দেশ বলবে, আমরা সংস্কারের পক্ষে', বেঙ্গালুরুর অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেন জয়শঙ্কর। এর আগে, গত সেপ্টেম্বরেও রাষ্ট্রপুঞ্জের সমালোচনা শোনা গিয়েছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রীর মুখে। রাষ্ট্রপুঞ্জ যে ভাবে সংস্কার ও পরিবর্তনে বাধা দিচ্ছে, তাতে অচিরেই এই আন্তর্জাতিক মঞ্চ আর সময়োপযোগী থাকবে না। মানুষও অন্যত্র সমস্যার সমাধান খুঁজতে যাবেন। এই প্রসঙ্গে 'বাসযাত্রীর' অনুষঙ্গ টানেন বিদেশমন্ত্রী। বলেন, 'এটিকে কোথাও একটা হালকা ভাবে বাসযাত্রীর সঙ্গে তুলনা করেছিলাম। আসনে বসে থাকা ব্যক্তি কিছুতেই তা পরের যাত্রীর জন্য ছেড়ে দেবেন না। এখানে পাঁচ জন যাত্রী বসে রয়েছেন। কখনও দেখবেন, যাত্রীদের কেউ ক্লান্ত, কেউ শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাও বাকিরা আসন ছেড়ে দেবেন না।'


 


প্রেক্ষাপট...
রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছে নয়াদিল্লি। নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের দাবিদারও ভারত। এখনও পর্যন্ত, আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চিন-এই পাঁচটি দেশই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে "ভেটো" দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র এই পাঁচজনেরই রয়েছে। এই সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের উপর চাপ বাড়ছে। ভারতের পাশাপাশি ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা ও জাপানও এই সদস্যপদের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন এবং পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর (এনএসজি) সদস্যপদ নিয়ে ভারতের দাবিকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া। একসুর শোনা গিয়েছিল আমেরিকার গলাতেও। পরে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সও সমর্থনের আশ্বাস দেয়। একমাত্র ব্যতিক্রম চিন।