নয়াদিল্লি: নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে ফের পথে নামলেন কৃষকরা। পঞ্জাব থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ২০০-র বেশি কৃষক সংগঠন। কৃষকদের এই 'দিল্লি চলো' আন্দোলন ঠেকাতে রাজধানীতে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু ২০২০-র পর আবারও কেন রাস্তায় নামতে হল কৃষকদের?  উত্তর একটাই, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের উপর আইনি সিলমোহর। (Farmers Protest 2.0)


দুধ ছাড়া মোটামুটি সব কৃষিজাত পণ্যই ক্রেতাদের বাজারে বিক্রি করেন কৃষকরা। এক কেজি বা দু'কেজি করে নয়, কুইন্টালে বাজারে কৃষিজাত পণ্য নিয়ে যান তাঁরা। এতে চাহিদার অনুপাতে জোগান বেশি হয়ে যায়। ফলে সাধারণত যে বারে বিক্রি হয় ফসল, তার চেয়ে অনেক কম দামেই ফসল ছেড়ে চলে আসতে হয় কৃষকদের। এতে লোকসান হয় তাঁদের। ফসলের মূল্য নির্ধারণের অধিকারও থাকে না। (Key Demands of Farmers)


কিন্তু নামমাত্র দামে ফসল বাজারে ছেড়ে আসতে হলেও, সেই ফসল চাষ করার সময় বীজ, সার, ডিজেল, ট্র্যাক্টর সবকিছুই বাজারমূল্যে কিনতে হয় কৃষকদের। তাই ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে আইনি সুরক্ষার দাবিতে লাগাতার দাবি জানিয়ে আসছেন কৃষকরা, যাতে চাষের খরচের নিরিখে সরকার ফসলের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয় এবং নামমাত্র দামে ফসল ছেড়ে দিতে না কৃষকদের, ক্ষতির মুখে পড়তে না হয় তাঁদের। 


আরও পড়ুন: PM Surya Ghar: বিনামূল্যে ৩০০ ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ, ঘোষণা হয়েছিল বাজেটে, এবার প্রকল্পের সূচনা মোদির


সামনে লোকসভা নির্বাচন, তার আগে জনগণের মন পেতে মরিয়া সব দলই। তাই তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে অন্তত যাতে বিষয়টির উল্লেখ থাকে, সেই দাবিও তুলছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। এ নিয়ে নানা মত বিশেষজ্ঞ মহলের। অর্থনীতিবিদদের কারও কারও মতে, যদি সরকার ফসলের দাম বেঁধে দেয়, সেক্ষেত্রে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ কিছু ফসলেরই চাষ করবেন কৃষকরা। তাতে কিছু ফসলের অতিরিক্ত জোগান দেখা দেবে। বাকি ফসল নিয়ে উৎসাহ থাকবে না তেমন। 


তাই কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সরকারের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ করা উচিত বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কারও কারও। তাঁদের মতে, সহায়ক মূল্যের পরিবর্তে কৃষকদের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত সরকারের। অর্থাৎ বছরে কিছু টাকা কৃষকদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে সরকারকে। জমির পরিমাণের নিরিখে বা মাথার নিরিখে এই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। 


কিন্তু প্রত্যেক কৃষককে সমপরিমাণ টাকা দেওয়ার বিরোধী অর্থনীতিবিদদেরই একাংশ। তাঁদের দাবি,  যাঁরা বেশি ফসল উৎপাদন করেন, চাষে অনেক বেশি সময় এবং পরিশ্রম বিনিয়োগ করেন, এক্ষেত্রে তাঁরা পিছিয়ে পড়বেন। কারণ বহু কৃষক সারাবছর শুধুমাত্র চাষই করেন, অনেকে চাষ করেন বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়। তাই সারাবছর চাষ করেন যাঁরা, তাঁদের সুরক্ষিত রাখতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ছাড়া উপায় নেই বলে মত অর্থনীতিবিদদের একাংশ। 


ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়ারও নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের জন্য ক্রেতাদের উপর চাপসৃষ্টি করা যেতে পারে। যেমনটি চিনিকলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রয়েছে। আইনত সেখানে আখচাষিদের ন্যায্য দাম দিতে হয়। ফসল কেনার ১৪ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হয় মূল্য। আবার সরকারি সংস্থাই সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে পারে। সরকার যদি অনিচ্ছুক হয়, সেক্ষেত্রে কৃষকদরা বাজারে নামমাত্র মূল্য ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হলে, তাঁদের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে সরকার। মধ্যপ্রদেশে এর প্রয়োগ হয়েছে আগে। হরিয়ানাতেও কিছু ফসলের উপর এই পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হয় কিছু ফসলের উপর। 


তবে ওই দুই রাজ্যেই মান্ডি রয়েছে, যেখানে সরকারের খাতায় নাম নথিভুক্ত রয়েছে কৃষকদের। এর ফলে, প্রত্যেক লেনদেনের রেকর্ড থাকে। কত টাকায় ফসল বিক্রি করছেন কৃষক, কত পরিমাণ ফসল বিক্রি করছেন, সবের রেকর্ড রয়েছে সরকারের কাছে। প্রত্যেক দেশে তা চালু করতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।