নয়াদিল্লি: বাবা চাষি। সেই আবেগ বুকে বয়ে নিয়ে দিল্লি-হরিয়ানার সিঙ্ঘু বর্ডারে চলে এসেছেন শাকিল মহম্মদ কুরেশি, যেখানে শীতের ঠান্ডার কামড় সহ্য করে কেন্দ্রের তিন কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে জমায়েতে বসে আছেন হাজার হাজার কৃষক। প্রতিদিন সকাল আটটায় সমাবেশের কাছে রাস্তার ওপর জামাকাপড়ের স্টল খুলে বসেন তিনি। বিনামূল্যে শীতবস্ত্র বিলি করেন প্রতিবাদী কৃষকদের। স্থানীয় লোকজনদের হাতে তৈরি প্রায় ৩০০ সোয়েটার, জ্যাকেট এপর্যন্ত বিলিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বাগপতের এই কৃষক-পুত্র। নয়তো শীতবস্ত্র বেচে এমনি সময়ে দিনে ২৫০০ টাকা আয় হয় তাঁর। কিন্তু লড়াকু মানুষের জন্য কিছু করতে পারার সুখের মূল্য টাকাপয়সা দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। তাই উত্তর দিল্লির নারেলার বাসিন্দা, স্ত্রী, বাচ্চাদের নিয়ে সংসার করা শাকিল বলেন, আমার বাবা কৃষক। তাই জানি, ওদের জীবন কী কঠিন। কৃষকরা তো বেশি কিছু চাইছেন না, নিজেদের ফসলের ন্য়য্যমূল্যটুকু ছাড়া! কিন্তু তাঁর তো কোনও আয় হচ্ছে না? শাকিল বলেন, একটা ভাল কাজে এটাই আমার অবদান। ব্যাস!
প্রতিবাদী কৃষকদের জন্য সমর্থন আসছে নানা মহল থেকে। কিছু লোকজন, এনজিও যেমন নিজস্ব উদ্যোগে তাঁদের জন্য লঙ্গরখানা খুলেছেন, নিত্য়প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করছেন, অন্যরা আবার ফ্রি মেডিকেল ক্য়াম্প বসিয়েছেন। কেউ স্বেচ্ছায় থালাবাসন মেজে দিচ্ছেন, ময়লা সাফ করছেন, মোবাইল ফোনে চার্জের ব্যবস্থা করছেন, জামাকাপড়ও কেচে দিচ্ছেন।
গত প্রায় দুসপ্তাহ ধরে কৃষকরা দিল্লি ঢোকার একাধিক সীমান্ত এলাকা অবরোধ করে রয়েছেন। দাবি কেন্দ্রকে নতুন কৃষি আইনগুলি বাতিল করতে হবে। তাদের বক্তব্য, আইনগুলি কর্পোরেটদের সুবিধা করে দেবে, চিরাচরিত পাইকারি পণ্য বাজার ও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ব্যবস্থার অবসান হবে। কৃষক নেতারা সরকারের নয়া আইন সংশোধনের বুধবারের প্রস্তাব খারিজ করে জানিয়েছেন, আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
শাকিল বলেন, বেশিরভাগ চাষিই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। তবে কিছু লোকের লড়াই চালিয়ে যেতে মদত লাগবে।
নিজের বড় জামাকাপড়ের দোকান খোলার স্বপ্ন আছে শাকিলের। এক প্রতিবাদী কৃষক তাঁর স্টল থেকে শীতবস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় যখন বলেন, তোমার দোকানটা ছোট হলেও হৃদয় বড়। ঈশ্বরের আশীর্বাদে একদিন তোমার সুদিন আসবে, মাথা নীচু করে নীরবে হাসেন তিনি।
সন্ধ্যা নামতে একদল নিহাং শিখ হাজির শাকিলের দোকান। শীতবস্ত্র চাই, কিন্তু তখন সব শেষ। তাঁদের ভরসা দিয়ে শাকিল বললেন, কাল সকালে সবাই এসো। তোমাদের জন্য জ্যাকেট নিয়ে আসব।