নয়াদিল্লি: অনলাইন বেচাকেনায় সুবিধে হয়েছে জঙ্গিদের। বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থা থেকে নাশকতার রসদ কিনছে তারা। টাকাও মিটিয়ে দিচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট পরিষেবার মাধ্যমে। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনার কনভয়ে যে হামলা হয়েছিল, তার বিস্ফোরকও ই-কমার্স সাইট থেকেই কেনা হয়েছিল। পৃথিবীর সর্বত্র সন্ত্রাসী কাজকর্মে ব্যবহৃত আর্থিক লেনদেনের উপর নজরদারি চালায় যে সংস্থা, সেই Financial Action Task Force (FATF) এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল। (FATF Report)

সন্ত্রাসে আর্থিক লেনদেন নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে FATF, তাতেই এমন দাবি করা হয়েছে। সন্ত্রাসে আর্থিক মদত কোথা থেকে আসছে, কোন পথে টাকা তছরুপ করা হচ্ছে, তার উপর নজর রাখে FATF. তারা জানিয়েছে, মানুষের সুবিধার্থে যে ডিজিটাল পরিষেবা চালু করা হয়েছে, আর্থিক লেনদেনকে যেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা হয়েছে, জঙ্গিদের হাতে তার অপব্যবহার হচ্ছে। অনলাইন টাকা ঢুকছে তাদের কাছে, সেই টাকা এদিক-ওদিক যাচ্ছে অনলাইনই, আবার টাকার ব্যবহারও হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমেই। (Pulwama Terror Attack 2019)

এ প্রসঙ্গে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার কথাও উঠে এসেছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, পুলওয়ামা হামলায় যে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল, তার মূল উপাদান ছিল অ্যালুমিনিাম পাওডার। Amazon-এর মতো ই-কমার্স সাইট থেকে তা কেনা হয়েছিল। পুলওয়ামার ওই হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান প্রাণ হারান। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের নাম উঠে আসে হামলায়। সেই সময় তদন্তেও অনলাইন হামলার সরঞ্জাম জোগাড় এবং প্রস্তুতির বিষয়টি উঠে আসে। 

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে গোরক্ষনাথ মন্দিরে যে হামলা হয়, তার কথাও উঠে এসেছে রিপোর্টে। ISIS-অনুপ্রাণিত এক যুবক নিরাপ্ততারক্ষীদের উপর হামলা চালায়। জানা গিয়েছে, PayPal ব্যবহার করে ISIS-এর এজেন্টদের ৬.৭ লক্ষ টাকা পাঠায় ওই হামলাকারী। নিজের অবস্থান আড়াল করতে, একাধিক VPN পরিষেবা ব্যবহার করে ওই হামলাকারী। সবমিলিয়ে ৪৪ বার বিদেশে লেনদেন চালায়। ভারতে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে VPN পরিষেবা সংস্থাকেও টাকা পাঠায় সে। সন্দেহ হওয়ায় ওই হামলাকারীর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় PayPal. 

FATF-এর দাবি, অনলাইন লেনদেনে তেমন ঝামেলা থাকে না, সহজে এবং দ্রুত টাকা পাঠানো যায়, কোথা থেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে, তা বোঝাও যায় না। ফলে  জঙ্গিদের মধ্যে অনলাইন লেনদেন বাড়ছে। নাশকতা চালানোর ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট দুনিয়ার উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে তাদের। অনলাইন রাসায়নিক, 3D প্রিন্টেড সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরকের উপাদান কিনছে তারা। পাশাপাশি, অনলাইনই অনুদান ঢুকছে তাদের কাছে। Peer-to-peer বা P2P-র মতো অনলাইন মাধ্যম ছদ্মনাম ব্যবহারে অনুমতি দেয়। ফলে কোন টাকা সন্ত্রাসীদের কাছে যাচ্ছে, তা সহজে বোঝা যায় না।

কিছু দেশের সরকার সন্ত্রাসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মদত জোগায় বলেও দাবি করেছে FATF. নির্দিষ্ট ভাবে কোনও দেশের নাম যদিও উল্লেখ করা হয়নি, তবে এমন অভিযোগ নতুন নয়। ভারত বরাবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত জোগানোর অভিযোগ তুলে আসছে। পাকিস্তানকে FATF-এর ধূসর তালিকায় ফিরিয়ে আনার দাবিও তুলেছে ভারত।