ঝাঁসি : রহস্যজনক অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল গৃহবধূর দেহ। শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জানান আত্মঘাতী হয়েছেন বধূ। ঘটনাক্রম, মৃতদেহ দেখে পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহও ছিল, আত্মঘাতীই হয়েছেন ঝাঁসির গৃহবধূ৷ কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের মোড় ঘুরিয়ে মৃতার ৪ বছরের কন্যা। পুলিশের কাছে সে হাতে এঁকে বোঝাল কীভাবে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আর এই স্কেচ দেখে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের ৷ মেয়ের হাতে আঁকা ছবি দেখে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত, আত্মহত্যা নয়,  স্বামীর হাতে খুনই হয়েছেন ওই শিশুর মা৷ তারপর  মৃতদেহ এমন ভাবে ঝোলানো হয়েছে, যাতে মনে হয়  আত্মঘাতী হয়েছেন ওই মহিলা । 

উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মায়ের মৃত্যুর পর চার বছরের মেয়ের আঁকা ছবি এবং জবানবন্দিই ধরিয়ে দিল তার বাবাকে।  দর্শিতা নামে ওই ছোট্ট মেয়েটি  জানায়, তাঁর  বাবা সন্দীপ বুধোলিয়া মা সোনালীকে নির্যাতন করেই খুন করেছেন। তারপর দেহ ঝুলিয়ে রাখেন যাতে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হয়।  শ্বশুরবাড়ির লোকজনও  সোনালীর পরিবারকে জানায়, আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের মেয়ে। তারপর যখন মৃতার বাবা-মা এসে পৌঁছান, তখন তাঁরা ৪ বছরের নাতনির কাছ থেকে 'আসল কথা'শুনতে পান। শিশুর বক্তব্যে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জানান তাঁরা। পুলিশকে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি এঁকে বোঝায় ওই শিশু। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সোনালীর চার বছরের শিশুকন্যার আঁকা ছবিই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ওই ছবিতেই সে তুলে ধরেছে তার বাবা কীভাবে মায়ের উপর অত্যাচার করত।   

পরে দর্শিতা সাংবাদিকদেরও  জানায়, তার বাবাই মাকে মারধর করে মেরে ফেলেছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মাথায় পাথর দিয়েও আঘাত করেন। তারপর তার দেহ ঝুলিয়ে দেন । পরে, তিনি দেহটি নামিয়ে একটি বস্তার ভেতরে রাখেন। দর্শিতা বল, বাবা আগেও তার মাকে খুন করার হুমকি দিত। দর্শিত জানায়, বাবা ভয় দেখাত তার পরিণতিও মায়ের মতোই হতে পারে।  

সোনালীর পরিবারের অভিযোগ ,  ২০১৯ সালে বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্বারা নির্যাতিত।  বিয়েতে  নগদ ২০ লক্ষ টাকা পণ নিয়েছিল পাত্রপক্ষ। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তারা আবার একটি গাড়ি দাবি করে। তিনি গাড়ি দিতে অপারগ হলে শুরু হয় মেয়ের উপর  অত্যাচার। সোনালী কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর, নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।  কারণ জামাই সন্দীপ ছেলে চেয়েছিল, অভিযোগ মৃতার বাবার।  কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর পরিবার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে যায়।  সম্প্রতি, সোনালী ঝাঁসিতে এক তুতো ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন।  ঠিক তখনই সন্দীপ ফোন করে তাঁকে বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেন। পরের দিন সকালে, সোনালীর পরিবার ফোন করে জানায় যে তার শরীর খারাপ।  কিছুক্ষণ পরেই তাঁদের জানানো হয় মেয়ে  আত্মহত্যা করেছেন । তাঁরা যখন পৌঁছন, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। 

পুলিশ মেয়ের বক্তব্য ও মৃতার পরিবারের অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তাহলেই বিষয়টি অনেক পরিষ্কার হবে।