দ্বারভাঙা : লকডাউনে তার কীর্তি দেখে চমকে উঠেছিল দেশ। আহত বাবাকে বাড়িতে ফেরাতে ১২০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছিল বিহারের কিশোরী। গুরগাঁও থেকে পিছনের সিটে বাবাকে বসিয়ে সোজা বিহার যাত্রা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। এক বছরের মাথায় পিতৃহারা বিহারের সেই 'সাইকেল গার্ল' জ্যোতি পাসওয়ান।


মাঝে প্রায় এক বছরের ব্যবধান। যাকে বাড়ি ফেরাতে এত উদ্যোগ, সোমবার হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন তার সেই বাবা। বিহারের সাইকেল গার্ল এখন পিতৃহারা। গত বছর জানুয়ারির কথা। অটোরিকশা চালিয়ে রোজগার ছিল বাবা মোহন পাসওয়ানের। যদিও একটা দুর্ঘটনার ফলে কঠিন সমস্যার মুখে পড়েন মোহন। চিন্তা বাড়িয়ে ঘাড়ের ওপর এসে পড়ে লকডাউন।


করোনার জেরে দিনের পর দিন বেড়েই চলছিল লকডাউনের সীমা। রোজগার হারিয়ে তাই আর পেরে উঠছিলেন না মোহন। জ্যোতি বুঝতে পারছিল বাবার সমস্যা। বাড়ি ভাড়ার টাকা বাকি পড়ছে। নিত্যদিন খাবার জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটছে বাবার। তাই আর দেরি করেনি সে। বাবাকে বুঝিয়ে কোনওভাবে বিহারের বাড়িতে ফেরানোর জন্য রাজি করে।


কিন্তু সেখানেও বাদ সাধে লকডাউন। ট্রেন, বাসের অভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় দেশের পরিবহণ পরিষেবা। বেগতিক দেখে তাই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কেনে জ্যোতি। এরপরই শুরু হয় ১২০০ কিলোমিটারের যাত্রাপথে পাড়ি। বাবাকে পিছনের সিটে বসিয়ে প্যাডেল শুরু করে ১৪ বছরের কিশোরী। বাকিটা ইতিহাস। গন্তব্যের চাকা এসে থামে বিহারের দ্বারভাঙা গ্রামের সিংওয়ারা ব্লকে। গ্রামের মেয়ের এই কীর্তি দেখতে বেরিয়ে আসে সিরহুলি গ্রামের মানুষ। 


দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে জ্যোতির এই কীর্তি। একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে সাইকেল গার্লের নাম। বিষয়টি নজরে আসে সাইকেল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার। পরবর্তীকালে জ্যোতির এই অদম্য সাহসের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। সাইকেল গার্লের এই কীর্তির প্রশংসা করেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।