মহাভারতের অশ্বত্থামাকে মনে আছে? গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র, সাহসী যোদ্ধা এবং দুর্যোধন নেতৃত্বাধীন কৌরব সেনার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই অশ্বত্থামা।
শিবের তপস্যা করে তাঁর বরদানে মহা-শক্তিশালী পুত্রলাভ করেছিলেন দ্রোণাচার্য। দেবাদিদেবের বরে অশ্বত্থামার কিছু অনন্য শক্তি ছিল। অন্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতাশালী হওয়ার পাশাপাশি, অশ্বত্থামার কপালে একটি রত্ন ছিল। যে কারণে, তাঁর মধ্যে দৈবিক শক্তি ছিল। অশ্বত্থামা ছিলেন অজেয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ব্যথা ও শ্রান্তি তাঁকে ছুঁতে পারত না। সর্বোপরি, তিনি ছিলেন 'চিরঞ্জিবী'। মহাদেবের বরে তিনি অমরত্বলাভ করেছিলেন।
অস্ত্র ব্যবহারের কলা ও রণকৌশল শেখার জন্য ছোট বয়সেই বাবা দ্রোণাচার্যের গুরুকূলে যোগ দিয়েছিলেন অশ্বত্থামা। সেই সময় কৌরব ও পাণ্ডব-- উভয় পক্ষই দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিত। তবে, পাণ্ডবদের তুলনায় কৌরব, বিশেষ করে দুর্যোধনের বেশি কাছে ছিলেন অশ্বত্থামা।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন দ্রোণাচার্য-পুত্র। দুর্যোধনকে গুরুতর জখম অবস্থায় দেখে, অশ্বত্থামা পণ করেছিলেন, পাণ্ডবদের থেকে তিনি এর প্রতিশোধ তুলবেন। একইসঙ্গে বাবাকে ছলের মাধ্যমে হত্যা করার বদলাও নেবেন।
সেই মোতাবেক, অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের শিবিরে যান পাঁচ ভাইকে হত্যা করে দুর্যোধনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে। কিন্তু, আদতে দ্রৌপদীর পাঁচ সন্তানকে হত্যা করে বসেন তিনি। সর্বোপরি, তিনি ঘুমের মধ্যে হামলা করে যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করেন।
নিজের অপরাধের হাত থেকে মুক্তি পেতে, মহর্ষি বেদ ব্যাসের সঙ্গে দেখা করেন অশ্বত্থামা, যিনি তাঁকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলেন। ঠিক ওই সময়ে দ্রৌপদীর পাঁচ সন্তানের হত্যার জন্য অশ্বত্থামার থেকে বদলা নিতে পাণ্ডবরাও ব্যাস ঋষির আশ্রমে পৌঁছন।
পঞ্চ পাণ্ডবকে একসঙ্গে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অশ্বত্থামা। পাঁচ ভাইকে একসঙ্গে মারতে ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করেন তিনি। পাল্টা শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করতে।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধ্বংসের কথা ভেবে, ব্যাস ঋষি নিজের দৈবিক শক্তি ব্যবহার করে দুটি ব্রহ্মাস্ত্রের সংঘর্ষ রুখে দেন। অর্জুন ও অশ্বত্থামাকে নিজ নিজ অস্ত্র ফিরিয়ে নিতে বলেন মহর্ষি। অর্জুন ব্যাসঋষির আদেশ পালন করেন।
কিন্তু অশ্বত্থামা বলেন, তিনি ওই অস্ত্র ফেরানোর কৌশল জানেন না। ব্যাসঋষি তখন অশ্বত্থামাকে বলেন, অস্ত্রের দিশা পাল্টে দিতে। অশ্বত্থামা ইচ্ছাকৃতভাবে অভিমন্যূর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী উত্তরার দিকে তাক করেন।
গর্ভস্থ শিশুর হত্যা করায় অশ্বত্থামাকে অভিশাপ দেন শ্রীকৃষ্ণ। বলেন, তিনি শান্তি ও মোক্ষলাভের আশায় তিনি বিশ্বের সব প্রান্তে গেলেও, পাবেন না। অশ্বত্থামাকে তাঁর মাথার মণি খুলে যুধিষ্টিরকে দেওয়ারও নির্দেশও দিয়েছিলেন কৃষ্ণ।