নয়াদিল্লি: লাদাখ সীমান্ত চিনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে চলতি সংঘাতের আবহে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে দারুণ খবর। কিছুদিন আগেই দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ফ্রান্স থেকে যে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রবল শোরগোল হয়েছিল, অবশেষে তার প্রথম ব্যাচের ৬টি জেট বিমান ২৭ জুলাই নাগাদ ভারতে আসছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের খবর। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে অনিচ্ছুক সামরিক কর্তারা জানিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত, চিনের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ফলে তৈরি হওয়া উত্তেজনার আবহে চরম সতর্ক থাকা ভারতীয় বায়ুসেনার সামগ্রিক যুদ্ধ করার ক্ষমতা বাড়বে, ভারতের প্রতিপক্ষদের, শত্রুদের পরিষ্কার সাবধানবার্তাও দেওয়া যাবে রাফাল হাতে এলে।
২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান চিনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। সেদিন দুদেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্ত মেনে কেউ গোলাগুলি না চালালেও লোহার কাটা বসানো হাতিয়ার নিয়ে, পাথর ছুঁড়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুদেশের জওয়ানরা।
প্রায় সাত সপ্তাহে সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গত ২ জুন টেলিফোনে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে টেলিফোনে হওয়া আলোচনায় ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে করোনাভাইরাস অতিমারী সংক্রমণ সত্ত্বেও নির্ধারিত সূচি মেনেই রাফাল জেটবিমান ডেলিভারি দেওয়া হবে।
বায়ুসেনার তরফে অবশ্য প্রথম ব্যাচের রাফাল বিমান হাতে আসা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
রাফালের প্রথম স্কোয়াড্রনের ঘাঁটি হবে বায়ুসেনার আম্বালা এয়ারফোর্স স্টেশন। বায়ুসেনার সবচেয়ে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলির অন্যতম ধরা হয় আম্বালা স্টেশনকে।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য় ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সরকারি স্তরে চু্ক্তি হয় ২০১৬-র সেপ্টেম্বর। এর ভিন্ন ধরনের শক্তিশালী অস্ত্র বহনের ক্ষমতা আছে। ইউরোপের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা এমবিডিএ-র মেটিওর বিয়ন্ড ভিস্যুয়াল রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ও স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইলহ হবে রাফালের অস্ত্র প্যাকেজের মূল শক্তি। মেটিওর হল আকাশপথে এয়ার-টু-এয়ার যুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আনা পরবর্তী প্রজন্মের বিভিআর এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি,ফ্রান্স, স্পেন ও সুইডেনের মতো দেশগুলির সামনে একই ধরনের বিপদ মোকাবিলায় এই হাতিয়ার বানিয়েছে এমডিবিএ।
ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ছাড়াও রাফাল জেট বিমানে থাকবে ইজরায়েলি হেলমেটভিত্তিক ডিসপ্লে, রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার, লো ব্যান্ড জ্যামার, ১০ ঘন্টার ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডিং,ইনফ্রা-রেড সার্চ ও ট্র্যাকিং সিস্টেম সমেত ভারতের কথা মাথায় রেখে তৈরি বেশ কিছু সুবিধা।
নতুন জেট বিমানগুলি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি রাখা, পাইলটদের প্রশিক্ষণসমেত যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে বায়ুসেনা।
রাফালের দ্বিতীয় ব্যাচের জেটবিমানগুলিকে নিয়োগ করা হবে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা বেসে। দুটি ঘাঁটিতে শেল্টার, হ্যাঙ্গার ও মেনটেন্যান্সের সুবিধার মতো পরিকাঠামো নির্মাণে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছে বায়ুসেনা।
জানা গিয়েছে, ৩৬টি রাফালের মধ্যে ৩০টি হবে ফাইটার জেট, ৬টি ট্রেনার জেট। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জেটবিমানগুলি দুই আসনের, মূল যুদ্ধবিমানের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই থাকবে সেগুলিতে।