কলকাতা: নয় নয় করে পেরিয়ে গিয়েছে ১১১ বছর। অতল গভীরে কোথাও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু টাইটানিকের ভবিতব্য মেনে নিতে খটকা লাগে আজও। তাই ধ্বংসাবশেষ দেখতেই বার বার জলে ডুব দেওয়ার রীতি চলে আসছে আজও। জলের নীচে, এত বছর পর টাইটানিক (Titanic) কী অবস্থায় রয়েছে, তা দেখতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আবছায়া ছবি, ঝিরঝিরে ভিডিও-ও তাই গিলে খেতে দেখা যায়। সেই উৎসুক মানুষজনের জন্যই জলের নীচে পড়ে থাকা টাইটানিকের ঝকঝকে ছবি সামনে এল এবার (Titanic Wreck)।


জাহাজ থেকে মহাসাগরের গভীরে শক্তিশালী আলো ফেলে প্রথমে ম্যাপিং করা হয়। তার পর ডিজিটাল স্ক্যান করে সামনে আনা হয়েছে পূর্ণ অবয়ব। তাতে শুধু ক্ষয়িষ্ণু জাহাজের বর্তমান চেহারাই নয়, তার আশপাশের সবকিছু 3D-তে ছবি দেখার মতোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাহাজের সামনের অংশ, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পিছনের অংশ, জাহাজের উপরি তল, সবকিছুর বর্তমান অবস্থা ফুটে উঠেছে ওই ছবিতে। ভিডিও-র আকারেও দেখা যেতে পারে সবকিছু।




১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে যায় টাইটানিক (Titanic News)। প্রথম যাত্রাপথেই হিমশৈলে ধাক্কা লেগে জলের নীচে চলে যায়। তাতে সওয়ার প্রায় ১৫০০ মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। ভাগ্য়জয় করে বেঁচে ফিরে ছিলেন কিছু যাত্রী। মহাসাগরের অতলে, ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে এই মুহূর্তে পড়ে রয়েছে তার অবশিষ্টাংশ। কিন্তু তাকে ঘিরে কৌতূহল রয়ে গিয়েছে আজও। 



জলের নীচে টাইটানিকের স্পষ্ট ছবি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঠিক কী ঘটেছিল, যে জাহাজ ডুবতে পারে না বলে দাবি করা হয়েছিল, কী করে প্রথম যাত্রাই তার শেষ যাত্রা হয়ে গেল, আাগামী দিনে তার রহস্য় উদঘাটনে এই 3D ভিডিও এবং ছবি কাজে লাগবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।


আরও পড়ুন: Global Warming: সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ফেরেনি হুঁশ, আরও চড়বে তাপমাত্রা, ২০২৩-’২৭ হবে সবচেয়ে উষ্ণ


টাইটানিক নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন পার্কস স্টিফেনসন। তাঁর মতে, এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর অধরা রয়ে গিয়েছে। জাহাজটি আজও রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে। ফলে জাহাজটিকে ঘিরে কল্পকথা এবং শ্রুতিকথার আধিক্যই বেশি। প্রমাণ ভিত্তিক গবেষণা আজও অধরা। এই 3D ভিডিও এবং ছবি সেই রাস্তা উন্মুক্ত করল বলে মত পার্কসের।


আটলান্টিক মহাসাগরের অতল গভীরে, ১৯৮৫ সালে প্রথমন টাইটানিকের অবশিষ্টাংশের হদিশ মেলে। কিন্তু এত গভীরে, অন্ধকারে পড়ে রয়েছে সেটি যে, তার ঝাপসা ছবিই তোলা সম্ভব হয়েছে এখনও পর্যন্ত। কিন্তু ডিজিটাল স্ক্যান করে যে ছবি সামনে আনা হয়েছে, তাতে সম্পূর্ণ জাহাজ, তার ভগ্নাংশও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জাহাজের অগ্র এবং পশ্চাৎ ভাগ আলাদা আলাদা পড়ে রয়েছে। মাঝখানে প্রায় ২ হাজার ৬০০ ফুট দূরত্ব। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভগ্নাংশ।


সমুদ্র, সাগর এবং মহাসাগরের ম্যাপিং করে ম্যাগেলান লিমিটেড নামের একটি সংস্থা। আর টাইটানিক নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানাচ্ছে আটলান্টিক প্রোডাকশন্স। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে তারাই যৌথ ভাবে এই কাজে হাত দেয়। টাইটানিকের আগুপিছু, ধ্বংসাবশেষের চারপাশে প্রায় ২০০ ঘণ্টা আলাদা করে কাটিয়েছে বিশেষজ্ঞদের একটি জাহাজ। সবমিলিয়ে ৭ লক্ষ ছবি তোলা হয়, যাতে প্রত্যেক কোনা থেকে টাইটানিককে দেখানো সম্ভব হয়।