তিরুঅনন্তপুরম: ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনকে ১.৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিল কেরল সরকার। মঙ্গলবার তাঁর হাতে চেক তুলে দেয় পিনারাই বিজয়ন সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। পরে তা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হওয়াতেই এই ক্ষতিপূরণ ধার্য করে আদালত। যবনিকা পতন হল আড়াই দশকের মামলার।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কিছু গোপন নথি এবং দেশের ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনের প্রযুক্তিগত কিছু গোপন তথ্য তিনি শত্রু দেশে পাচার করেছিলেন। এই কাণ্ডে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ইসরোর আরও এক প্রবীণ বিজ্ঞানী ডি শশীকুমারন। দেশের মহাকাশ প্রযুক্তির এই্ গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে মালদ্বীপের আরও ২ জন মহিুলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৯৪ সালে যখন এই অভিযোগ ওঠে তখন নারায়ণন ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন বিভাগের প্রধান ছিলেন। রকেটে তরল জ্বালানি দিয়ে যে রকেট চালনা করা যায় সেটা তিনিই প্রথম দেশকে দেখিয়েছেন। কিন্তু এ হেন বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মতো মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় রীতিমতো তোলপাড় পড়ে যায়। কংগ্রেসের এ কে অ্যান্টনি, ওমেন চণ্ডীর মতো প্রথমসারির নেতাদের বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়তে হয় কংগ্রেসের করুণাকরণকে। কেরলের তত্কালীন পুলিশ সুপারকে( রামন শ্রীবাস্তব) এর বলি হতে হয়।
সিবিআই তদন্তের পর ১৯৯৮ সালে এই মামলা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলে, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা মামলায় ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় অকারণে তাঁকে(নাম্বি নারায়ণন) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট এও জানায়, নারায়ণন আরও অনেক বেশি পাওয়ার যোগ্য। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য তিনি চাইলে নিম্ন আদালতে আবেদন করতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করতে রাজ্যের মুখ্য সচিব কে জয়কুমারকে নিয়োগ করে কেরল সরকার। আলোচনার পর তাঁর( কে জয়কুমার)-এর পরামর্শ আদালতে জমা পড়ে। কেরল সরকারের তরফে এই ক্ষতিপূরণ পেয়ে খুশি ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী। তাঁর কথায়, ’’ আজ আমি খুশি। তবে সেটা ক্ষতিপূরণের জন্য নয়। অবিচারের বিরুদ্ধে আমার লড়াই শেষ হল। ‘‘
আড়াই দশক ধরে চলা মামলায় কখনও কখনও ক্লান্ত বোধ করেছেন ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী। হতাশ হয়ে পড়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ’’ বহুবার আমার মনে হয়েছে আত্মঘাতী হই। কিন্তু একজন বিশ্বাসঘাতক হয়ে মরতে চাইনি। এত বছর আমি বেঁচে রয়েছি সকলকে সত্যটা জানানো দরকার।‘‘ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও নাম্বি নারায়ণনকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।