কলকাতা: ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হাতে এমন অনেক অস্ত্র আছে যার সাহায্যে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ইমিউনিটি বাড়িয়ে সুরক্ষিত রাখা যায়। তাই রোগমুক্তিতে এ বার ভারতীয় আয়ুর্বেদে আস্থা রাখার দিন এসেছে। অন্তত আয়ুষ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক দাবি সে কথাই বলছে। কোভিড মোকাবিলায় আয়ুর্বেদের ভূমিকাকে এড়িয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছতে চাইলে তা আরও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে বলেও দাবি করেছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য আয়ুর্বেদ ও যোগ-নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবস্থাপনার একটি জাতীয় খসড়া প্রকাশ করেছেন। ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠানে আয়ুষ দপ্তরের একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী শ্রী শ্রীপাদ যশো নায়েক, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃ রাজীব কুমার এবং নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভাগের সদস্য ডঃ ভি কে পাল উপস্থিত ছিলেন। আয়ুর্বেদ ও যোগ চিকিৎসার মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধের জন্য একটি আন্তঃবিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়। আইসিএমআর – এর প্রাক্তন মহানির্দেশিক ডঃ ভি এম কাটোচ এই কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, যেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাফল্য পাওয়া গেছে – সেগুলির ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন ওষুধের উপকারিতা এবং সেগুলি রোগীদের ওপর প্রয়োগ করলে তার কোনও বিরূপ প্রভাব দেখা যায় কিনা – এসব তথ্য ঐ প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। কোভিড-১৯ জন্য জন্য গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের কাছে এই প্রতিবেদন পেশ করার পর সেটি যৌথ নজরদারি গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে নীতি আয়োগের সুপারিশক্রমে এই খসড়াটি তৈরি করা হয়।
ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস মূলত শ্বাসনালীকে আক্রমণ করে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নয়। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের হাতে এমন অনেক অস্ত্র আছে যার সাহায্যে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের ইমিউনিটি বাড়িয়ে সুরক্ষিত রাখা যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, যে সব রোগীর কোভিড-১৯-এর তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও উপসর্গ নেই তাঁদের উপর আয়ুর্বেদ প্রয়োগ করে ভাইরাস মুক্ত করা অনেক সহজ। কেরল, গোয়া ইত্যাদি রাজ্যেও ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আয়ুষ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘দিনাচার্য’ ও ‘ঋতুচার্য’ নিয়ম মেনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকাংশে আটকানো যায়। ‘দিনাচার্য’ মানে, দৈনিক জীবন ধারণে কিছু পরিবর্তন আনা। যেমন, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কয়েকটি যোগব্যায়াম অভ্যাস, জলপান, পর্যাপ্ত ফল-সব্জি খাওয়া, মন ভাল রাখার পাশাপাশি কিছু গাছের নির্যাস খাওয়া।
‘ঋতুচার্য’-র অর্থ, ঋতু অনুযায়ী কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা। যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু আসন ও প্রাণায়াম করা, গরম জল পান করা, জলে লেবু ও আদার রস মিশিয়ে পান করা, রান্নায় হলুদ, জিরে, আদা, রসুন, ধনে, গোলমরিচ, কালোজিরে ও দারচিনি ব্যবহার করা ইত্যাদি। এর সঙ্গে নারকেল তেল মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলে ফের গরম জলে কুলকুচি করে নিলেও মুখের মধ্যেকার ভাইরাস মরে বলে জানিয়েছে আষুষ মন্ত্রক।
করোনা রোগীদের উপসর্গ কমাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ওষুধের পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপির ব্যবহারও করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) মন্ত্রক থেকে কোভিড রোধে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, কোভিডের ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ ওষুধের সাহায্য নিলে সংক্রমণের দাপট অনেকাংশে আটকানো যায়।
জানা যাচ্ছে, প্রতি দিন গুলঞ্চ সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। গরম জল খাদ্য হজমে সাহায্য় করে। তাই গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে সেই জল ঘন ঘন খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন সি রয়েছে এমন ফলও খেতে হবে।
রান্নাঘরের নিত্যব্যবহৃত ভেষজ যেমন, হলুদ, জিরা, ধনে, রসুন ইত্যাদি রাখতে হবে মশলার তালিকায়। ক্রনিক গলার সমস্যা বা শুকনো কাশির ক্ষেত্রে দিনে এক বার পুদিনা পাতা বা আজওয়ান পাতার বাষ্প গ্রহণ করতে হবে। লবঙ্গ-চূর্ণকে মধু অথবা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দু’-তিন বার খাওয়া যেতে পারে। প্রতি দিন সকালে ১০ গ্রাম চ্যবনপ্রাশ খাওয়া উপকারী। তুলসি, দারচিনি, গোলমরিচ-চূর্ণ সমৃদ্ধ চাও পান করা যেতে পারে। স্বাদ বৃদ্ধিতে গুড় বা লেবু মেশানো যেতে পারে। আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো ১৫০ মিলিলিটার উষ্ণ দুধে মিশিয়ে খেলেও ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে।এই সব নিয়ম মেনে চললে কোভিড-১৯-এর মারাত্মক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায় বলে দাবি আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়াও কোভিডের প্রকোপে অসুস্থ হয়ে পড়লে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কয়েকটি ওষুধের সাহায্য নিয়ে রোগের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দেওয়া সম্ভব বলেও তাঁদের মত।
করোনা রুখতে আয়ুর্বেদে আস্থা রাখার পরামর্শ দিল আয়ুষ মন্ত্রক
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
10 Oct 2020 02:59 PM (IST)
আয়ুষ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘দিনাচার্য’ ও ‘ঋতুচার্য’ নিয়ম মেনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকাংশে আটকানো যায়।
NEXT
PREV
খবর (news) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -