নয়াদিল্লি: এক কোটি, দু’কোটি নয়, ১৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ (PNB Scam)। কানাকানি হওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন। হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে (Mehul Choksi) তাই ফেরার ঘোষণা করা হয়। তাঁকে খুঁজে বের করতে রেড কর্নার নোটিসও জারি করে ইন্টারপোল। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ইন্টারপোলের (Interpol Database) তথ্যভাণ্ডার থেকেই গায়েব হয়ে গেলেন মেহুল! তাঁর বিরুদ্ধে জারি হওয়া রেড কর্নার নোটিস তো দূর, মেহুলের নামই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেল (Red Corner Notice)।


এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা


সূত্রের খবর, তাঁর নাম সরাতে ইন্টারপোলের কাছে সরাসরি আবেদন জানিয়েছিলেন খোদ মেহুলই। তার পরই ইন্টারপোলের তথ্যভাণ্ডার থেকে তাঁর অস্তিত্বই গায়েব হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। পঞ্জাব ন্য়াশনাল ব্যাঙ্কের ১৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে দেশত্যাগী মেহুলকে নিয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও। দুর্নীতি মামলায় মেহুল এবং তাঁর ভাগ্নে নীরব মোদির বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। বেআইনি ভাবে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ এবং তাদের LoP দেখিয়ে অন্যত্র থেকে তোলা টাকা নিয়ে তাঁরা ফেরার হন বলে অভিযোগ।


বিশ্বের ১৯৫টি সদস্য দেশকে নিয়ে তৈরি ইন্টারপোল। দাগী অপরাধী, সন্ত্রাসবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ, আত্মসমর্পণ, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চালুর ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের তরফে রেড কর্নার নোটিস জারি করা হয়। এই রেড কর্নার নোটিস আসলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তদন্তকারী সংস্থার কাঁধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব বর্তায়।


আরও পড়ুন: NVF Scam : মৃতের পরিবারের সদস্য় সাজিয়ে NVF-এর চাকরি বিক্রি ? রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব ডিভিশন বেঞ্চের


২০১৮ সালে মেহুলের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। তারও ১০ মাস আগে ভারত ছেড়ে পালিয়ে যান মেহুল। এই মুহূর্তে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডাতে রয়েছেন তিনি। সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।  সিবিআই-এর তরফে রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন হলে, চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন মেহুল। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতে জেলের দৈন্যদশা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।  


এর পর বিষয়টি পাঁচ সদস্যের ইন্টারপোল কোর্টে ওঠে। সেখানে সবকিছু খতিয়ে দেখে মেহুলের যুক্তি খারিজ করা হয় বলে সূত্রের খবর। এর পর, ২০২১ সালের মে মাসে  অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে কার্যত উধাও হয়ে যান মেহুল। পড়শি দেশ ডমিনিকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হন। সে খবর সামনে আসতেই সিবিআই-এর ডিআইজি সারদা রাউতের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারীদের একটি দল কাজে লেগে পড়ে। ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিসে ভর করে মেহুলকে প্রত্যর্পণের চেষ্টা শুরু হয়।


মেহুলকে আর ভারতে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব হয়নি আজও


কিন্তু তার পর যত সময় এগিয়েছে, বিষয়টি ক্রমশই জটিল হয়ে দাঁড়ায়। লন্ডনে মেহুলের আইনজীবী মাইকেল পোলাক স্কটল্য়ান্ড ইয়ার্ডে আলাদা করে অভিযোগ দায়ের করেন। জানান, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে কৌশলে বার করা হয়েছে মেহুলকে। কিন্তু সেই দেশের আইন আনুযায়ী, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার  নাগরিক সরাসরি ব্রিটেনের রানির প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন জানানোর অধিকারী। তাতে মেহুলকে ভারতে প্রত্যর্পণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ মেহুলের আইনজীবী সরাসরি ডমিনিকা কোর্টে হিবিয়াস কর্পাস আবেদন জমা দেন। তার আওতায় মেহুলের অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মামলা শুরু হয়। শুরু হয় আলাদা করে তদন্তও।


এর ফলে মেহুলকে আর ভারতে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব হয়নি। বরং ৫১ দিন জেলে থাকার পর ২০২১ সালের জুলাই মাসে ডমিনিকার আদালতে জামিন পান মেহুল। চিকিৎসার সুযোগ পান। ফিটনেস সার্টিফিকেট পেলে অ্যান্টিগুয়া ফিরে যাওয়াতেও মেলে ছাড়পত্র। এমনকি ডমিনিকায় বেআইনি বাবে প্রবেশের মামলাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।