কাবুল: আফগানিস্থানের ঘোর প্রদেশ। কামার গুল নামে কিশোরীর চোখের সামনে ঘটেছিল ব্যাপারটা। তার বাবা-মাকে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল তালিবান জঙ্গিরা। তার চোখের সামনেই মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের।
এমন ঘটনা যে মানুষ চোখের সামনে দেখে সে হয়তো চূড়ান্ত বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তেমনটাই ঘটল মেয়েটার বেলায়। তালিবানরা বোঝার আগেই মুহূর্তে হাতে তুলে নিল পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ঘরে রাখা বন্দুক। চালাতে শুরু করল গুলি। কিছু বোঝার আগেই লুটিয়ে পড়ল দুই তালিবান জঙ্গি। আহত হল আরও কয়েকজন।
স্থানীয় পুলিশ কর্তা হাবিবুরহমান মালেকজানা জানান, গুলের বাড়ির সামনে এসে তার বাবাকে খুঁজছিল জঙ্গিরা। গুলের বাবা ছিলেন সরকারের সমর্থক, আর সেই কারণেই তালিবানদের চক্ষূশূল। গুলের বাবাকে জঙ্গিরা ঘর থেকে বের করে আনতে গেলে বাধা দেন মা। তখন দুজনকেই টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে বের করে আনে জঙ্গিরা। কিশোরীর বাবা-মাকে কিশোরীর সামনেই গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয় জঙ্গিরা।
গুল ঘরের ভিতরেই ছিল। ঘটনায় কিছুটা বিহ্বল হয়ে পড়লেও, সাহস সঞ্চয় করে পারিবারিক এক-৪৭ রাইফেলটা নিয়ে সোজা বেরিয়ে আসে বাইরের উঠোনে। চালাতে শুরু করে দেয় এলোপাথারি গুলি। প্রথমেই ঝাঁঝরা করে দেয় সেই দুই জঙ্গিকে যারা তার বাবা-মাকে মেরেছে। তারপরও চালাতে থাকে বন্দুক। হতচকিত হয়ে পালিয়ে যায় আহত বাকি জঙ্গিরা।
গুলের বয়স ১৪ থেকে ১৬-র ভিতর। কিন্তু পরিস্থিতি রণংদেহি করে তোলে কোমল কিশোরীকে। ঘটনার পর পরই আবার কিছু তালিবান জঙ্গিরা ফিরে আসে গুলকে মারতে। কিন্তু ততক্ষণে গ্রামে উপস্থিত সরকার সমর্থক মানুষরা বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। তাদের পাল্টা আক্রমণে পিছউ হঠতে বাধ্য হয় তালিবানরা।
ঘোর প্রদেশের গভর্ণর আরিফ আবের জানিয়েছেন, গুল এবং তার ভাইকে নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। তারা নিরাপদে আছে। গুলের এই সাহসী কাজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। মাথায় ফেট্টি বাঁধা, কোলে বন্দুক রাখা গুলের ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সকলে লিখছেন, ‘সাবাশ কন্যা সাবাশ, জবাব নেই সাহসিকতার’। কেউ লিখেছেন, ‘বাবা-মাকে হারানোর সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা হয় না, কিন্তু এমন প্রতিশোধ মনে রাখার মতো।’