কলকাতা: পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে মারাত্মক হারে কমে গিয়েছে, গলে গিয়েছে বরফ। আর তা নিয়ে মারাত্মক চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে পৃথিবীপৃষ্ঠ হারিয়েছে ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ। পৃথিবীর মেরু অঞ্চল, পর্বত আর হিমবাহগুলো স্যাটেলাইট জরিপের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বিস্ময়কর তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, গত ২৩ বছরে ক্রমাগতভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে কীভাবে বিশ্বব্য়াপী উষ্ণতা বাড়ছে এবং বরফের স্তর হারিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যায়, এই পরিমানে বরফ গলে যাওয়ার ফলে সৌর বিকিরণ প্রতিফলিত করে মহাকাশে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও কমে আসছে পৃথিবীর। এতে সাদা বরফ অদৃশ্য হচ্ছে এবং কালো সমুদ্র কিংবা মাটি বেরিয়ে আসছে যা কিনা আরো বেশি তাপ শোষণ করছে এবং পৃথিবীকে আরো বেশি উষ্ণ করে তুলছে।
বরফ হারানোর এই মাত্রাকে ‘বিস্ময়কর’ বলেছেন লিডস ইউনিভার্সিটি, এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ভিত্তিক বিজ্ঞানীরা। তাঁদের আশঙ্কা, হিমবাহ আর বরফের চাদর গলতে গলতে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রে জলের উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে লিডস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং এর পরিচালক অধ্যাপক অ্যান্ডি শেফার্ড বলেন, ‘, সমুদ্রে জলের উচ্চতা প্রতি সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়া মানে এক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যূত হবে, বিশেষত যারা অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলে বসবাস করে।’
অধ্যাপক শেফার্ড আরও বলেন, ‘অতীতেও হয়তো কেউ অ্যান্টার্কটিক কিংবা গ্রিনল্যান্ড নিয়ে সীমিত পরিসরে গবেষণা করে জানিয়েছেন যে সেখানে বরফ গলছে। কিন্তু এই প্রথম সামগ্রিকভাবে বিশ্ব থেকে যে বিপুল পরিমান বরফ হারিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা সত্যিই স্তব্ধ করে দিয়েছে।’
গবেষকরা বলছেন, গত তিন দশকে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলই ব্যাপকভাবে বরফ হারিয়েছে এবং এটি ক্রমাগত চলছে। গবেষক দলের সদস্য লিডস ইউনিভার্সিটির টম স্লেটার বলেন, ‘আমরা যে বরফ হারিয়েছি তার প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে, এই ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ দিয়ে ১০০ মিটার পুরু চাদর তৈরি করে তা দিয়ে গোটা যুক্তরাজ্যকেই ঢেকে দেয়া যেত। এটা অভূতপূর্ব।’
খারাপ পরিস্থিতির যে পূর্বাভাস দ্য ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর তরফে দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া, কানাডা ও অন্যান্য অঞ্চলের হিমবাহ; আর্কটিক ও এন্টার্কটিকের সামুদ্রিক বরফ; এন্টার্কটিক ও গ্রিনল্যান্ডের ভূমি ঢেকে রাখা বরফের চাদর এবং এন্টার্কটিক ভূখণ্ড থেকে সমুদ্রে প্রসারিত বরফের তাক নিয়ে স্যাটেলাইট জরিপ বিশ্লেষণ করেছেন ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত।
মোটের উপর বিপুল বরফ হারিয়ে ফেলার ফলে বিশ্বে আগামী দিনে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হিসেব করতে বসেই রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে আগামী দিনে বিশ্বে বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে তা চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে তাঁদের কপালে।