নয়াদিল্লি: সাহেবরা তো কাঁটা-চামচে খায়, আমাদের মত গ্রাসে করে মুখে খাবার তোলে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই উনিশ শতকে হাত পরিষ্কারের উপকারিতা বুঝতে পেরেছিলেন হাঙ্গারির ইগনাস সেমেলউইস। এই ডাক্তারবাবুই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বলেছিলেন, বেশিরভাগ রোগ ছড়ায় নোংরা হাত থেকে, তাই মুড়ি মুড়কির মত ওষুধ না খেয়ে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রাথমিক উপায়, হাতদুটো পরিষ্কার রাখা।

ইগনাস জন্মেছিলেন হাঙ্গারির বুদাপেস্টে, তারিখটা ছিল ১ জুলাই, ১৮১৮। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারি পাশ করার পর ধাত্রীবিদ্যায় করেন মাস্টার্স ডিগ্রি। ১৮৪৭ সালে তিনি ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের মেটারনিটি ক্লিনিকের চিফ রেসিডেন্ট ডক্টর হন। সে সময় ইউরোপের হাসপাতালগুলির মেটারনিটি ওয়ার্ডগুলোয় সদ্য প্রসূতিদের মড়ক লেগেছে, চাইল্ডবেড ফিভার নামে এক রহস্যময় সংক্রমণের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। তখন ইগনাস উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা করেন, রোগী বিশেষত প্রসূতি মায়েদের দেখার আগে কেন চিকিৎসকদের ভালভাবে হাত পরিষ্কার করা উচিত। তাঁর উপদেশ মানার পরেই সংক্রমণ করে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে।

তাঁর এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দেন ভিয়েনার তরুণ চিকিৎসক ও পড়ুয়ারা। শুরু হয় রোগী দেখার আগে হাত ধোয়ার চল। ১৮৫৫-য় পেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হন ইগনাস। ১৮৬১-তে প্রকাশিত হয় তাঁর বই দি এটিওলজি, কনসেপ্ট অ্যান্ড প্রফিল্যাক্সিস অফ চাইল্ডবেড ফিভার। ১৮৬৫ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, নিয়ে যাওয়া হয় মানসিক রোগের হাসপাতালে, সেখানেই মৃত্যু হয়। যে ডাক্তার হাত পরিষ্কারের কথা বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যু হয় ডান হাতের একটি ক্ষতে সংক্রমণের জেরে। সেই রোগই তাঁর জীবন কেড়ে নেয়, যার বিরুদ্ধে সারা জীবন লড়াই করেন তিনি।

বহু বছর পর তাঁর গবেষণা স্বীকৃত হয় জার্ম থিওরি অফ ডিজিজ নামে। আর এবার গুগল ডুডল মনে পড়াল ভুলে যাওয়া এই চিকিৎসকের কথা।