নয়াদিল্লি : সমাজের বিশিষ্টরা রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে সচেতন হবেন, স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করবেন, সেটাই কাম্য। সেই চেতনাবোধ থেকেই অতীতে একাধিক ইস্যুতে প্রতিবাদে জানিয়ে জাতীয় মর্যাদা-সম্পন্ন পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্তরা। যা নিয়ে কার্যত অসন্তুষ্ট কেন্দ্র। এবার এই প্রবণতায় রাশ টানতে নয়া প্রস্তাব পেশ সংসদীয় কমিটির। "রাজনৈতিক কারণে" পুরস্কার ফেরানো রুখতে পুরস্কার পেতে চলেছেন, এমন বিশিষ্টদের আগাম সম্মতি নিয়ে সই করানোর প্রস্তাব দেওয়া হল সংশ্লিষ্ট কমিটির তরফে। তার পরেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মানে ভূষিত করার কথা বলা হয়েছে।


পরিবহন, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটি 'ফাংশনিন অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস অ্যান্ড আদার কালচারাল ইন্সটিটিউশন' শীর্ষক একটি রিপোর্ট জমা করেছে সংসদে। কমিটির নেতৃত্বে থাকা YSRCP-র বিজয় সাই রেড্ডি জানিয়েছেন, 'যখন কাউকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ভাবা হবে, সংশ্লিষ্ট প্রাপকের যেন মতামত নেওয়া হয়। যাতে তিনি কোনও রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে তা ফেরাতে না পারেন। কারণ, সেটা দেশের পক্ষে অসম্মানজনক।' সংশ্লিষ্ট কমিটিতে রয়েছেন- সোনাল মান সিং, মনোজ তিওয়ারি, ছেদি পহেলওয়ান, দীনেশ লাল যাদব 'নীরুয়া', তীর্থ সিং রাওয়াত, রজনি পাটিল, তাপির গাও ও রাজীব প্রতাপ রুডি।   


প্রস্তাবের সমর্থনে কমিটির তরফে বলা হয়েছে, সাহিত্য অ্যাকাডেমি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যা নিয়ে 'রাজনীতিকরণের কোনও জায়গা নেই'। প্রস্তাবনা-রিপোর্টে সংযোজন, 'কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইস্যু যা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বাইরে, তা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অনেকেই পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। অ্যাকাডেমিস (যেমন-সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার)-এর তরফে পুরস্কার প্রদানের পর সেই পুরস্কার ফেরানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে। এহেন সিদ্ধান্ত শুধু সংশ্লিষ্ট সংস্থার স্বতন্ত্রভাবে কাজ করাকেই ছোট করে না, অন্যান্য প্রাপকের সাফল্যেরও অবমূল্যায়ন করে। যা সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট পুরস্কারের সম্মান এবং সুখ্যাতি নষ্ট করে দেয়।' 'অপমান' করার পরেও এহেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের অ্যাকাডেমিতে পুনর্নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিটি। তাদের সুপারিশ, এক্ষেত্রে আগে শর্ট-লিস্টেড প্রার্থীদের সম্মতি নেওয়া হোক। 


কমিটির তরফে আরও বলা হয়েছে, 'একটি সিস্টেম চালু করা যেতে পারে যেখানে প্রস্তাবিত পুরস্কারপ্রাপকদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের উদ্ধৃতি দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নেওয়া হবে এবং পুরস্কারপ্রাপ্তরা ভবিষ্যতে কোনও সময়ে পুরস্কারটির অসম্মান করতে পারবেন না। এই ধরনের অঙ্গীকার ছাড়া পুরস্কার দেওয়া যাবে না। পুরস্কারগুলি ফেরত দেওয়া হলে, পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে এই জাতীয় পুরস্কারের জন্য আর বিবেচনা করা হবে না।'


প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের কালবুর্গি হত্যা-মামলার ঘটনায় ৩৩ জন পুরস্কারপ্রাপক পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন- উদয় প্রকাশ, নয়নতারা শেহগাল ও অশোক বাজপেয়ির মত ব্যক্তিত্বরা। তার পর থেকেই একাধিক ইস্যুতে এভাবে প্রতিবাদ জানানোর ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক কালেই দেখা গেছে, WFI সভাপতি ব্রিজ ভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে গঙ্গায় পদক ভাসিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিখ্যাত কয়েকজন কুস্তিগির। এই পরিস্থিতিতে হালে, সম্মতি নেওয়ার পর পদ্ম পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও সেই তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর, অনেকেই সেই সম্মান গ্রহণ করতে চাননি।