সুরত: প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল একরত্তি সন্তান। কারণ সন্তান-সহ নতুন সংসার শুরু করতে নারাজ ছিলেন প্রেমিক। তাতেই মাতৃস্নেহ রূপ নিল নৃশংসতার (Crime News)। দু'বছরের শিশুকে নিজেহাতে খুন করলেন এক মহিলা। সন্তান নিখোঁজ বলে অভিযোগও দায়ের করলেন থানায়। বাঁচার রাস্তা খুঁজতে শেষ মেশ দ্বারস্থ হলেন হিন্দি ছবির। অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, গুজরাতের সুরত থেকে এমনই ঘটনা সামনে এসেছে। (Viral News)


গুজরাতের সুরত জেলার ডিন্ডোলি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। জানান, তাঁর বছর আড়াইয়ের সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দিন ধরে নিখোঁজ একরত্তি শিশুটি। অভিযোগ পেয়ে হন্যে হয়ে শিশুর খোঁজে নেমে পড়ে পুলিশও। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও হদিশ মেলেনি তার। হাতে আসেনি কোনও সূত্রও। তাতেই মায়ের উপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে পুলিশের। খতিয়ে দেখা শুরু হয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ। (Mother kills Child)


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় একটি নির্মীয়মান ভবনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু সেখান থেকে শিশুটিকে বেরোতে বা তাকে নিয়ে কাউকে বেরোতে দেখা যায়নি সিসিটিভি ফুটেজে। তাতেই ওই মহিলার উপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে। কিন্তু বার বার জিজ্ঞাসাবাদ সত্ত্বেও পুলিশের হাতে কোনও তথ্য আসছিল না। তাতে ডগ স্কোয়াড নামানো হয়। তার পরও খোঁজ মেলেনি শিশুটির। তাই জীবিত অবস্থাতেই শিশুটি ওই নির্মীয়মান ভবনের বাইরে গিয়েছে বলে ধারমা জন্মায় পুলিশের। 


আরও পড়ুন: NCP Political Crisis: 'চিন্তিত নেই...মমতা, খাড়গে ফোন করেছিলেন', এরপর কী করবেন শরদ?


এর পর সরাসরি নিজের প্রেমিকের দিকে আঙুল তোলেন ওই মহিলা। সন্তানকে প্রেমিকই অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। এর পর মহিলার প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু ওই মহিলার কাছ থেকে পাওয়া ঠিকানা ধরে গিয়েও হদিশ মেলেনি ওই ব্যক্তির। পরে খোঁজ মিললে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ঝাড়খণ্ড নিবাসী। কখনও সুরতে পা রাখেননি। 


এর পর শিশুটির উপরই সন্দেহ বদ্ধমূল হয় পুলিশের। চেপে ধরা হয় তাঁকে। তাতেই তিনি অপরাধ স্বীকার করেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু খুনের কথা স্বীকার করলেও, শিশুটির দেহ কোথায় রেখেছেন, তা প্রকাশ করার আগে পর্যন্তও পুলিশকে কার্যত নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরান ওই মহিলা। প্রথমে জানান, গর্ত খুঁড়ে পুঁতে দিয়েছেন। কিন্তু মাটি খুঁড়েও উদ্ধার হয়নি শিশুটির দেহ। তার পর জানান, পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। সেই তথ্যও মিথ্যে বেরোয়। 


লাগাতার পুলিশি জেরার মুখে পড়ে শেষ মেশ ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। জানান, নির্মীয়মান ভবনেরই একপাশে শৌচাগার তৈরি হচ্ছে। তার জন্য খোঁড়া হয়েছে গর্ত। সেই গর্তেই ছেলেকে মেরে ফেলে দিয়েছেন তিনি। ওই গর্ত থেকেই শিশুটির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনের কারণ জানতে চাইলে ওই মহিলা জানান, তিনিও আদতে ঝাড়খণ্ডেরই বাসিন্দা। প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিশুসন্তানকে নিয়ে বিয়েতে রাজি হননি প্রেমিক। তাতেই সন্তানকে শেষ করে দেন। 


তবে পুলিশকে নাকাবনাচোবানি খাওয়ানোর পরিকল্পনাও আগে থেকে সেরে রেখেছিলেন ওই মহিলা। সুরত পুলিশ জানিয়েছেন, 'সন্তানকে খুন করে হিন্দি ছবি 'দৃশ্যম' দেখেন ওই মহিলা। কী ভাবে দেহ লুকোতে হয়, ছবি থেকেই ধারণা পান। ছবিতে মৃতদেহ লুকিয়ে ধরা পড়েননি মূল চরিত্র। মামলার কিনারা হয়নি। তিনিও ছাড় পেয়ে যাবেন বলে ধারণা জন্মায় ওই মহিলার। সেই মতোই এগোন।' কিন্তু শেষরক্ষা হল না।