সুদীপ চক্রবর্তী, হেমতাবাদ : বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিশ্রুতিই সার, কাজ করেন না তাঁরা। এমনই অভিযোগ উঠছে। হেমতাবাদের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক দেবেন রায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কথামতো আজও নির্মাণ করা হয়নি তাঁর মর্মর মূর্তি। অথচ মৃত্যুর কিছুদিন পরেই এই এলাকায় এসে প্রয়াত বিধায়কের মূর্তি স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তার পরেও মর্মর মূর্তি তৈরি না হওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব থেকে পরিবারের লোকজন। কার্যত হতাশ প্রয়াত বিজেপি বিধায়কের পরিবার।


দেবেন রায়ের মৃত্যুর পর প্রথম প্রথম দল পাশে থাকলেও, এখন আর সেভাবে দলকে পাশে পাচ্ছেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপির হেমতাবাদ মণ্ডল কমিটির সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ও করোনার বিধি-নিষেধের জন্য একটু দেরি হচ্ছে।


২০২০ সালের ১৩ জুলাই নিজের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে বালিয়া মোড় এলাকায় একটি বন্ধ দোকানের সামনে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল হেমতাবাদের তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক দেবেন রায়ের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব দফায় দফায় এসেছিলেন হেমতাবাদে। এলাকায় এসে প্রয়াত বিজেপি বিধায়কের মূর্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতৃত্ব। মহা সমারোহ করে ২৯ অগাস্ট দিল্লি থেকে এসে হেমতাবাদের বালিয়া মোড়ে প্রয়াত বিজেপি বিধায়কের মূর্তি স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।


প্রায় একবছর অতিক্রান্ত হতে চলল সেই ভিত্তিপ্রস্তরের। সেখানে এখন শ্যাওলা জমেছে, মরচে পড়েছে বের হয়ে থাকা লোহার রডে। কিন্তু মূর্তি তৈরির আর কোনও উদ্যোগ নেয়নি বঙ্গ বিজেপি কিংবা কেন্দ্রীয় বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এমনটাই অভিযোগ। ফলে এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মনে জমছে ক্ষোভ। 


১৩ জুলাই প্রয়াত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়কের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী থাকলেও তাঁর বাড়িতে আর দেখা মেলেনি দলীয় কোনও নেতৃত্বের। স্থানীয় বিজেপি কর্মীরাই ওই ভিত্তিপ্রস্তরের উপর মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছিলেন। দেখা মেলেনি জেলা বিজেপি নেতৃত্বেরও। প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী চাঁদিমা রায়কে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে বিজেপি। কিন্তু হেরে যান চাঁদিমা দেবী। এরপর কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতৃত্ব তো দূরের কথা, জেলার কোনও নেতার পদার্পণ ঘটেনি প্রয়াত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে। আর প্রয়াত বিধায়কের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মূর্তি স্থাপনের বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। ফলে অভিমানে ফুঁসছেন প্রয়াত বিধায়কের আত্মীয় পরিজন থেকে হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির নেতা কর্মীরা।


 বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল কমিটির সভাপতি প্রাণ বর্মণ সরাসরি জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিচুতলার বিজেপি নেতা-কর্মীদের খেলনা মনে করে ব্যবহার করেন। হেমতাবাদের প্রয়াত বিজেপি বিধায়ক দেবেন রায়কে ভুলেই গিয়েছেন তাঁরা। 


বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখে না বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রয়াত বিজেপি বিধায়কের আত্মীয় পরিজন থেকে হেমতাবাদ এলাকার একাংশও।