নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ পুরোদমে প্রচারে নামলেও ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের সাতটিই ঝুলিতে পোরা বিজেপি বিধানসভা ভোটে মসনদ দখল করতে পারল না। লোকসভা নির্বাচনের সাফল্যের রেশ কয়েক মাস বাদে ধরে রাখতে পারল না কেন্দ্রের শাসক দল। সম্ভাব্য কী কী কারণে তারা আপের কাছে হারতে পারে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে।
সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক, কারণগুলি কী কী।
১. দিল্লিতে বিজেপির প্রচারের সিংহভাগ জুড়ে ছিল জাতীয় সুরক্ষা, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) প্রসঙ্গ। কিন্তু আমআদমি পার্টি (আপ) গুরুত্ব দিয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুর ওপর, যেগুলির মধ্যে ছিল বিনামূল্য়ে ইলেকট্রিসিটি, জল পরিষেবা ও দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নত করা। ভোটের ফলে স্পষ্ট, ছোট ছোট স্থানীয় ইস্যুগুলিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মানুষের কাছে। বিজেপির বোঝা উচিত, এমন কিছু প্রচারে তুলে আনা উচিত নয়, সাধারণ ভোটারের কাছে যার তাত্পর্য্য নেই,যারা চায়, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মায়ন উন্নত করার জন্য নীতি তৈরি করে সফল রূপায়ণ ঘটানো হোক।
২. মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও মুখ না থাকা বিজেপিকে সমস্যায় ফেলেছে। কেজরিবালের বিকল্প হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে কাউকে তুলে ধরতে পারেনি বিজেপি। তারা মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবে কাউকে প্রজেক্ট করতে না পারায় প্রচারে তার ফায়দা তুলেছে আপ। প্রার্থীদের তুলনায় বিজেপি দল হিসাবে নিজের ইমেজে বেশি ভরসা করেছে। কিন্তু এই কৌশল কাজে আসেনি। আপ 'কেজরিবাল বনাম কে?' শিরোনামে যে প্রচার চালিয়েছে, তাতে কেজরিবাল সরাসরি বলেছেন, বিজেপিকে বলছি, তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম জানাক, যার সঙ্গে যে কোনও জায়গায় বসে বিতর্ক করতে তৈরি আমি। সব টিভি চ্যানেলের সামনে পাবলিক ডিবেট হোক। বিজেপি জবাবে কিছু করতে পারেনি। মোদি-হাওয়াই তাদের ভোট বৈতরণী উতরে দেবে বলে বিশ্বাস করেছে বিজেপি।


৩. স্থানীয় স্তরে কোনও জনপ্রিয় মুখ না থাকার ফলে বিজেপিকে অতিরিক্ত ভরসা করতে হয়েছে মোদি-শাহ জুটির ওপর। কিন্তু এতে ভাল বার্তা যায়নি ভোটারদের কাছ। আপের একাধিক পরিচিত মুখ থাকায় সুবিধা হয়েছে। বিজেপির ক্ষমতার কাঠামো বিন্যাস স্থানীয় নেতাদের বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে দেয়নি। এরপর থেকে বিজেপিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে খুব বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া আটকাতে স্থানীয় ও রাজ্যস্তরের নেতাদের মধ্যে যথাযথ ক্ষমতা বন্টনের সিস্টেম তৈরি করতে হবে।

৪. এবারের ভোটের ফলে স্পষ্ট, বিজেপির জাতীয়তাবাদের অস্ত্রে মরচে ধরে গিয়েছে তাকে বারবার ব্যবহার করায়। বিজেপির যাবতীয় নীতিতে একমাত্র জোর দেওয়া হয়েছে হিন্দুত্বে, উগ্র জাতীয়তাবাদী আখ্যানে, যা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ভোটাররা। ফলে মানুষের মনে বিজেপির হিন্দুত্ব-নির্ভর প্রচার দাগ কাটতে পারেনি। মানুষ দেখেছেন, তাঁদের দৈনন্দিন মৌলিক সমস্যাগুলির দিকে নজর নেই বিজেপির।

৫. শাহিনবাগের সিএএ-এনআরসি বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভের ইস্যুতে বিজেপির প্রচার গ্রহণ করেনি ভোটাররা। বিজেপি শাহিনবাগ ইস্যু তুলে ধর্মীয় মেরুকরণের জোর চেষ্টা করে। অনুরাগ ঠাকুরের গোলি মারো হুমকি থেকে শুরু করে অমিত শাহের ‘এমন জোরে ইভিএমে বোতাম টিপুন যাতে শাহিনবাগে কারেন্ট লাগে’ মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল মেরুকরণ ঘটানো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই কৌশল সফল হয়নি।