শিমলা: ছবির মতো সাজানো রাজ্য আবারও বিপর্যয়ের মুখোমুখি। একটানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যয়। জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধস, হড়পা বানের প্রকোপও রয়েছে। তাতে এক সপ্তাহেই কমপক্ষে ৬০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিপুল। এই ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলে উঠতে অন্তত একটি বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু।


গত সপ্তাহ থেকে একনাগাড়ে ভারী বৃষ্টি হয়ে চলেছে হিমাচল প্রদেশে। পাহাড়ি এলাকায় এমন একটানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। রাজ্যের রাজধানী শিমলার একাধিক জেলাতেই ধস নেমেছে জায়গায় জায়গায়। সামার হিল, কৃষ্ণনগর, ফগলিতে ধসে মারা গিয়েছেন প্রায় ১২ জন।  বুধবার সকালেই সামার হিলে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। কালকা-শিমলা রেল রুটে মাটি ধসে গিয়ে শূন্যে ঝুলতে দেখা গিয়েছে লোহার রেললাইনকে।


হিমাচল সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সামার হিল থেকে মোট ১৩ জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে। ফগলি থেকে উদ্ধার হয়েছে পাঁচ জনের দেহ।  কৃষ্ণনগর থেকে দু'জনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে এ ছাড়াও একটি মন্দির ভেঙে পড়েছে। তার ধ্বসস্তূপের নীচেও দেহ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।



এর পাশাপাশি, মঙ্গলবার বিকেলে শিমলার প্রাণকেন্দ্র, কৃষ্ণনগরে হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে কমপক্ষে আটটি বাড়ি।  তাতে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার একাধিক বাড়ি খালি করে দিয়েছে প্রশাসন। সোলানে আবার মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে সোমবার। নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে ৮০০ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্যাংরা-সহ অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকাগুলিতে এখনও উদ্ধারকার্য চলছে।


হিমাচল প্রশাসনের পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী, এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৬০ জন মারা গিয়েছেন রাজ্যে। জায়গায় জায়গায় জল জমে রয়েছে। বৃষ্টিতে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সুখু। রাস্তাঘাট, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি মেরামত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি কাজ চলবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।


মুখ্যমন্ত্রী সুখু জানিয়েছেন, এখন থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলার লক্ষ্যে নেমে পড়েছে তাঁর সরকার। আগামী চার বছরের মধ্যে রাজ্যকে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন তাঁরা। আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী রাজ্যে পরিণত করবেন হিমাচল প্রদেশকে।  কিন্তু আপাতত এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। তাতে অন্তত একবছর সময় অতিবাহিত হবে।


এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে আগামী ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত হিমাচলের স্কুল এবং কলেজগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হিমাচলপ্রদেশ ইউনিভার্সিটিও আপাতত পঠনপাঠন বন্ধ রেখেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু'টি দল পৌঁছেছে সেখানে। একটি গিয়েছি শিমলায়, অন্যটি ক্যাংরায়। এর পাশাপাশি  বায়ুসেনা, সেনা এবং ইন্দো-তিব্বত সীমা পুলিশও উদ্ধারকার্যে হাত লাগিয়েছে। ধসের জেরে কমপক্ষে ৮০০ রাস্তা এখনও রয়েছে। পড়শি রাজ্য উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতিতিও বিপজ্জনক। চলতি বছরে, ভারী বর্ষণে বার বার বিপর্যয় নেমে এসেছে এই দুই রাজ্যে। তবে এখনই মুক্তি নেই, আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বার বার  যেভাবে বিপর্যয় নেমে আসছে, তাতে হিমাচলকে বিপর্যয় প্রবণ রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করতে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছে কেন্দ্র।