নয়াদিল্লি: বিধানসভা নির্বাচন মিটে গিয়েছে পাঁচ মাস আগে। তবে হরিয়ানা এখনও রাজনৈতিক ভাবে তপ্ত, যার নেপথ্যে রটেছে রোমহর্ষক একটি খুনের ঘটনা। শনিবার একটি স্যুটকেসের মধ্যে কংগ্রেসের কর্মী হিমানী নরওয়ালের দেহ উদ্ধার হয়। আর সেই নিয়েই এখন উত্তাল হরিয়ানা। বিশেস তদন্তকারী কমিটি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি, উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবিও উঠছে সব স্তর থেকে। আর সেই নিয়ে পারদ চড়ছে রাজনীতিরও। অন্য দিকে, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়ের দেহ সৎকার হবে না বলে জানিয়েছে হিমানীর পরিবার। (Himani Narwal Murder Case)

রোহতক পুলিশের চারটি দল এই মুহূর্তে খুনের ঘটনার তদন্ত করছে। এখনও পর্যন্ত একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে এই ঘটনায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ব্যক্তি অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, জেরায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে, যার মধ্যে হিমানীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল থেকে তোলাবাজির মতো অভিযোগ রয়েছে। (Himani Narwal Murder)

২২ বছর বয়সি হিমানী রোহতকের বিজয় নগরের বাসিন্দা ছিলেন । দেহ উদ্ধারের আগে তিন দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সাম্পলা বাস স্ট্যান্ডে রোহতক-দিল্লি হাইওয়েতে একটি স্যুটকেসের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। হিমানীর হাতে মেহেন্দি ছিল, গলায় বাঁধা ছিল স্কার্ফ। তখনও পর্যন্ত হিমানীর পরিচয় সামনে আসেনি। 

রবিবার রোহতক পুলিশ হিমানীর বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখে। পরিবার ও পরিজনদের বয়ান রেকর্ড করা হয়। জেরা করা হয় দুই সন্দেহভাজনকে। আর তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। আর ওই ব্যক্তিই জেরায় একের পর এক চাঞ্চল্য অভিযোগ করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। 

ধৃতের নাম সচিন। বাহাদুরগড়ের বাসিন্দা সে। বয়স ৩০ বছর। সচিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে দিল্লি থেকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় হিমানীর ফোনটি। জেরায় সচিন অপরাধ স্বীকার করেছে বলে খবর। কেন এই চরম অপরাধ ঘটিয়েছে, তার কারণও খোলসা করেছে। 

পুলিশকে সচিন জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন হিমানী। আরও টাকার দাবি করছিলেন তরুণী। শুধু তাই নয়, লাগাতার ব্ল্যাকমেলও করা হচ্ছিল তাকে। টাকার দাবি পূরণ করতে করতে, ভয়ে ভয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় হতোদ্যম হয়ে পড়ে সে এবং রোহতকের বাড়িতে গিয়ে হিমানীকে খুন করে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সচিন।

সচিনের একটি মোবাইল ফোনের দোকান রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় হিমানীর সঙ্গে পরিচয়, বন্ধুত্ব, পরবর্তীতে সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা। সচিন বিবাহিত, দুই সন্তানের পিতা। তার দাবি, দফায় দফায় হিমানীকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছিল সে। কিন্তু ১ মার্চ হিমানী তাকে বাড়িতে ডাকে এবং আরও টাকা দাবি করে বলে জানিয়েছে সচিন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে হুমকি দিতে শুরু করে হিমানী। টাকা না দিলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। বোঝাতে গেলে ঝগড়া শুরু হয় দু’জনের। তাতেই মোবাইলের চার্জার কেবল গলায় পেঁচিয়ে সে হিমানীকে খুন করে। 

সচিন জানিয়েছে, হিমানীকে খুন করে সে দোকানে ফিরে যায়। পরে ফের হিমানীর বাড়িতে যায়। স্যুটকেসে নিথর দেহটি পুরে রেখে দেয় সাম্পলা বাস স্ট্যান্ডে। হিমানীর মা যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, হিমানীর কোনও প্রেমিক বা বিশেষ পুরুষ বন্ধু ছিল না। হিমানীর মায়ের দাবি, তাঁর মেয়ে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, অন্যকে টাকা ধার দিতেন। খুন করে সচিন এখন তাঁর মেয়ের চরিত্রেও কালি ছেটাচ্ছে বলে অভিযোগ হিমানীর মায়ের। সচিনের মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলেছেন হিমানীর মা। কংগ্রেসে সাফল্য়ের মুখ দেখতে শুরু করেছিলেন হিমানী। তাই ষড়যন্ত্র করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি মায়ের। 

হিমানীর মা জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে লাগাতার খুনের হুমকি পাচ্ছিলেন। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় হেঁটেছিলেন, আবার হুডা পরিবারের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগও হয়। ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার স্ত্রী আশার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় হিমানীর। এর দরুণ অনেকে হিংসা করতে শুরু করে। তাঁর কথায়, “নির্বাচন এবং দলই আমার মেয়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এর জন্যই অনেক শত্রু তৈরি হয়েছিল। দলের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ওর বন্ধু কেউ ঘটিয়ে থাকতে পারে এই ঘটনা। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়িতেই ছিল মেয়ে।” বিচার না পাওয়া পর্যন্ত হিমানীর সৎকার হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁর মা। হিমানীর কাকা বলেন, “অভিযুক্ত যেই হোক, আমরা ন্যায় বিচার চাই। অভিযুক্তের পরিচয় খোলসা না হওয়া পর্যন্ত শেষকৃত্য হবে না। পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই আমাদের।”

এই গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনও শুরু হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা জানিয়েছেন, রোহতকের এসপি-র সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। পরিবার যাতে দ্রুত বিচার পায়, তা দেখবে রাজ্যের সরকার ও পুলিশ। দোষী ব্যক্তি কড়া শাস্তি পাবে বলেও আশ্বাসও দিয়েছেন হুডা। এই কঠিন সময়ে কংগ্রেস হিমানীর পাশে আছে বলে জানিয়েছেন হুডা। কংগ্রেস বিধায়ক বি বি বাত্রা জানিয়েছেন, হিমানী অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন। দলের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। বিজেপিৃর সাংসদ কিরণ চৌধরিও ন্যায় বিচারের দাবি তুলেছেন।