নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রেখেছে ভারত। সেই আবহে ইসলামাবাদের তরফে উড়ে এসেছে হুঁশিয়ারি। চিনও যদি একই পথে হাঁটে, ব্রহ্মপুত্রের জল যদি আটকে দেয়, সেই নিয়ে ভারতকে কার্যত ‘জুজু’ দেখানোর চেষ্টা করছে। সেই নিয়ে তাদেত উপযুক্ত জবাব দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। নিজেদের কল্পনার বশবর্তী হয়ে পাকিস্তান কাহিনি বুনছে বলে দাবি করেন। (Brahmaputra River)

ভারত যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছে, একই ভাবে চিন ব্রহ্মপুত্রের জল আটকে দিলে কী করবে দিল্লি, সম্প্রতি এই মর্মে হুঁশিয়ারি দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সহযোরানা ইহসান আফজল। সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আফজলকে কড়া জবাব দিয়েছেন হিমন্ত। এই দাবিই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। (Himanta Biswa Sarma)

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে হিমন্ত লেখেন, ‘ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করায় কাহিনি তৈরি করছে পাকিস্তান। চিন ভারতকে ব্রহ্মপুত্রের জল দেওয়া বন্ধ করলে কী হবে? তথ্য-সহ ব্যাখ্যা করছি। ভয় নয়, সত্য ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। ব্রহ্মপুত্রের বৃদ্ধি ভারতে, সঙ্কোচন নয়। ব্রহ্মপুত্রের মোট জলস্রোতের ৩০-৩৫ শতাংশই চিনের নিয়ন্ত্রণে- হিমবাহের গলন ও তিব্বতের সামান্য বৃষ্টি। বাকি ৬৫-৭০ শতাংশ ভারতেই—অরুণাচল, অসম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের মরশুমি বৃষ্টি, সুবানসিরি, লোহিত, কামেং, মানস, ধানসিরি, জিয়া-ভরালি, কোপিলি উপনদীর দৌলতে। খাসি, গারো, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের কৃষ্ণাই, দিগারু, কুলসির মতো নদী বাড়তি জল বয়ে আনে’। 

হিমন্ত আরও লেখেন, ‘চুটিংয়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে জলের স্রোত ২০০০-৩০০০ কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ডে, অসমের সমতল গুয়াহাটিতে তা ফুলেফেঁপে ১৫০০০-২০০০০। ব্রহ্মপুত্রের উজানের উপর ভারত নির্ভরশীল নয়। ব্রহ্মপুত্র ভারতের বৃষ্টিনির্ভর নদী ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে, সেটি ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের পরই শক্তিশালী হয়েছে। এই সত্যটা পাকিস্তানের জানা দরকার। আর চিন যদি জলের স্রোত বন্ধ করার কথা ভাবে (চিন এমন কোনও কথাই বলেনি), তাতে ভারত উপকৃতই হবে। প্রতিবছর বন্যা হবে না অসমে, যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হন, জীবনজীবিকা নষ্ট হয় প্রতিবছর। অন্য দিকে, পাকিস্তান ৭৪ বছর ধরে সিন্ধু জলচুক্তির সুবিধা নিয়ে এসেছে। এখন ভারত নিজের সার্বভৌমিক ক্ষমতা দাবি করায়, আতঙ্কিত। ওদের মনে করিয়ে দিই, ব্রহ্মপুত্রকে কোনও একপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে না। আমাদের ভূগোল, বর্ষা এবং সভ্যতা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে’।

ব্রহ্মপুত্রের উৎস তিব্বত মালভূমি। ভারতীয় উপমহাদেশ, দেশের উত্তর-পূর্ব অংশকে কৃষিকাজের জল জোগায়, পানীয় জল জোগায়, বাস্তুতন্ত্রকে ধরে রাখে। তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমের চেমাইয়ুংদাং হিমবাহ থেকে এর উৎপত্তি। তিব্বতে ইয়ারলুং সাংপো নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র। অরুণাচলপ্রদেশে নাম হয়েছে দিহাং।  সমস্ত উপনদী সঙ্গমে এসে মিশলে নাম হয় ব্রহ্মপুত্র, অর্থাৎ ভগবান ব্রহ্মের সন্তান। বাংলাদেশে আবার নাম যমুনা। শেষে সুন্দরবনে এসে মিশেছে গঙ্গায়, যা থেকে তৈরি হয়েছে সুন্দরবন বদ্বীপ।