নয়াদিল্লি: ঝাঁ চকচকে শহরের বহুতল। কিন্তু আগুন গিলে খেল সব। হংকংয়ের বহুতলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৪৪। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। বহু মানুষের নিখোঁজ রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি আগুন। এই ঘটনায় তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। (Hong Kong Fire)
বহু বছর এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি হংকং। বুধবার বিকেলে ২০০০ ফ্ল্যাটের ওই বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সুউচ্চ বহুতলটি চোখের সামনে আগুনের গ্রাসে চলে যায়। বুধবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৬। বৃহস্পতিবার সকাল হতে হতে তা বেড়ে হয় ৪৪। তবে হতাহতের সংখ্য়া অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ৩০০ মানুষের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। (Hong Kong Building Fire)
এই অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে চারিদিকে যখন হাহাকার, সেই সময় তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধজনক ভাবে নরহত্যা ঘটানোয় তারা যুক্ত, এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য তারাই দায়ী বলে সন্দেহ পুলিশের। তবে ঠিক কী ঘটিয়েছে তারা, এখনও পর্যন্ত খোলসা করা হয়নি।
হংকংয়ের উত্তরের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্টের ওই বহুতলের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে। জানা গিয়েছে, বহুতলটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল। তাই বাঁশের ভারা বাঁধা ছিল ৩২ তলা বিল্ডিংয়ের বাইরে। সেই বাঁশের ভারা থেকেই আগুন আরও বিধ্বংসী আকার ধারণ করে। সংবাদ সংস্থা AFP জানিয়েছে, বিধ্বংসী আগুনের মধ্যে তীব্র শব্দও শোনা যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আকাশ। ছাই উড়ে গিয়ে পড়ে বহু দূরের এলাকাতেও।
ওই বহুতলের এক বাসিন্দা, ৬৫ বছর বয়সি Yuen জানিয়েছেন, গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে রয়েছেন তিনি। আবাসনের অধিকাংশ বাসিন্দাই বয়স্ক। বিপদে ছুটে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা নেই তাঁদের শরীরে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় ফ্ল্যাটের জানলা-দরজাও বন্ধ করে রেখেছিলেন বাসিন্দারা। আগুন লেগেছে বলে গোড়ায় বুঝতেই পারেননি অনেকে। ফোন করে জানাতে তবেই বুঝতে পারেন। উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়ে আগুনের গ্রাসে এক দমকলকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে সেখানে।
আটটি বিল্ডিং নিয়ে তৈরি ওই বহুতল কমপ্লেক্সে প্রায় ২০০০ ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখান থেকে ৯০০-র বেশি মানুষকে উদ্ধার করে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হয়েছে। তবে বহু মানুষই আগুনে আটকে পড়েন। তবে আগুন এমন বিধ্বংসী আকার ধারণ করল কেন, তা নিয়ে আর একটি তত্ত্ব সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, বহুতল গায়ে এমন উপাদান লাগানো ছিল, যা দাহ্য। এর ফলেই আগুন এত ভয়ঙ্কর ওঠে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
গভীর রাত পর্যন্ত আবাসনের বাসিন্দাদের আর্তনাদ শোনা গিয়েছে। পরিবার-পরিজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। বহুতল থেকে চাহর খসে পড়েছে যেমন, তেমনই নীচ থেকে আবাসনের ফ্ল্যাটগুলির ভিতরও আগুন ছড়াতে দেখা গিয়েছে। আগুন এতটাই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে যে বহুতলের আশেপাশের মাটিও গরম হয়ে ওঠে। ফলে বহুতলের কাছাকাছি পা ফেলার উপায় ছিল না। দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর আর্মস্ট্রং চ্যান জানান, হাওয়ায় এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংয়ে ধ্বংসাবশেষ উড়ে গিয়ে পড়ে, যা থেকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে।
চিনের কর্তৃত্ব না মানলেও, হংকং চিনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও। সবরকম সাহায্য়ের আশ্বাস জুগিয়েছেন সকলকে। জনবসতিপূর্ণ হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক কালে এত ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি সেখানে। দমকলের ১৪০টি ইঞ্জিন মোতায়েন রয়েছে সেখানে। অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে ৬০টি। কমপক্ষে ৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আহত অবস্থায়। এর আগে, ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে এমনই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ঘটে হংকংয়ের একটি বাণিজ্যকেন্দ্রে। দীর্ঘ ২০ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকে। এবারের ঘটনায় সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরে এসেছে।