অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরসভায় ভোট হতে পারে বলে সূত্রের খবর। দিনক্ষণ ঠিক হলেই ঘোষণা হবে প্রার্থী তালিকা। তার আগে ‘দাদা দিদি ধরে টিকিট মিলবে না’, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গলবারের এহেন হুঁশিয়ারির জেরে তৃণমূলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে, তাহলে কীভাবে বাছাই হবে কলকাতা পুরসভায় প্রার্থীপদ? সূত্রের খবর, তিনটি স্তরে রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার কলকাতার কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে, অভিষেক বলেন, দুঃসময়ে টিকিট না পেয়ে, দলকে ব্ল্যাকমেল করবেন, সমস্যায় ফেলবেন, এরকম ভুলেও ভাববেন না। দাদা দিদি ধরে টিকিট পাবেন না। কারও ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে, ভাবছেন স্ত্রীকে বা আত্মীয়কে দাঁড় করাবেন, তা চলবে না। বহু বছর কাউন্সিলর বলে পৈতৃক সম্পত্তি বলেও ভাববেন না। দল যাঁকে যেখানে টিকিট দেবে, মেনে নিতে হবে। কেউ যদি বিজেপিতে যাবেন ভাবেন, এখান থেকে বেরিয়ে বাস ধরে চলে যান। ভাড়া তৃণমূল ভবন থেকে দিয়ে দেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে, তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার রিপোর্ট, প্রশাসনিক রিপোর্ট এবং কাউন্সিলরদের থেকে চাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রার্থীপদ ঠিক করবে শীর্ষনেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, প্রশান্তের সংস্থার কর্মীরা প্রত্যেক তৃণমূল কাউন্সিলরের এলাকায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। শাসক কাউন্সিলরদের থেকেও বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় ইস্যু, স্থানীয় ক্লাবের নাম, ক্লাবের সম্পাদকের নাম ও ফোন নম্বর, স্থানীয় বড় হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিনদের নাম, নিরপেক্ষ অথচ প্রভাবশালী, এলাকার এরকম বাসিন্দাদের নাম, আগে সক্রিয় ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে নিষ্ক্রিয়, এমন তৃণমূল কর্মীদের নাম, তৃণমূলে যোগদান করতে পারে এরকম সম্ভাব্য কিছু নাম,স্বেচ্ছাসেবক যাঁদের বাইক আছে, এরকম বেশ কিছু নাম চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কাউন্সিলরদের দেওয়া এসব তথ্য যাচাই করবে প্রশান্তের সংস্থা। পাশাপাশি কোন কাউন্সিলর এলাকায় গত ৫ বছরে কী কাজ করেছেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আলাদা প্রশাসনিক রিপোর্টও। সব খতিয়ে দেখে দলীয় নেতৃত্ব যোগ্য মনে করলেই মিলবে টিকিট।
তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচনের এই পদ্ধতি নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিন্হা বলেছেন, আমি তো বলছি, যারা শুনছিল তাঁদের তৃণমূল ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। কোথাকার ভুইফোঁড় সংস্থা, তারা এসে এসব বলে যাচ্ছে। আর যারা এতদিন ধরে তৃণমমূল করল তারা বসে বসে শুনছে? সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেছেন, আমাদের দলে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করি। এজেন্সি ঠিক করে না।
পাল্টা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, মমতাই সব ঠিক করবে। পিকে? দলের সঙ্গে পরামর্শদাতাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। দল জানে কাকে প্রার্থী করতে হবে। ডেটা কালেকশন মানেই সিলেকশন নয়। মমতাই মুখ, ওই নেত্রী। ফার্স্ট বয়েরও টিউটর লাগে। মাধ্যমিকে যারা ভাল করে, তাদেরও তো মাস্টার। অভিষেক ভাল কাজ করছে। কিন্তু মমতাই মাথা।