নয়াদিল্লি: কথায় বলে, রাজনীতিতে কোনও চিরশত্রু বা মিত্র হয় না। আসন্ন লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে সেই প্রাচীন আপ্তবাক্য আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু (TDP Alliance With BJP)। বছরপাঁচেকের 'বিচ্ছেদের' পর ফের বিজেপির হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিল তাঁর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। এক পথে হেঁটেছে জনসেনা পার্টিও (জেএসপি)। লোকসভা ভোটের পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনও আসন্ন। সূত্রের খবর, দুই ভোটের কথা মাথায় রেখেই 'গাঁটছড়ার' সিদ্ধান্ত। শনিবার 'এনডিএ পরিবারে' দুই দলকে স্বাগত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। 


ভোট-অঙ্ক...
এবার সাধারণ নির্বাচনে ৩৭০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে বিজেপি। এনডিএ ধরলে সংখ্যাটা ৪০০ পেরিয়ে যাওয়ার কথা বলে আশা তাদের। সে দিক থেকে দেখলে, কিছু কিছু রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট তাদের ভোটবাক্সে ফয়দা তুলতে পারে। তার উপর টিডিপি-র সঙ্গে তাদের 'রাজনৈতিক সখ্যের'  ইতিহাসও রয়েছে। বস্তুত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনডিএ-রই শরিক দল ছিল টিডিপি। সে সময় অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু। কিন্তু রাজ্যের জন্য় আর্থিক সাহায্য়ের দাবি তুলে হঠাৎ জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান। ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে যে বিধানসভা ভোট হয়, তা জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসের কাছে লজ্জার হার হয়েছিল টিডিপি প্রধানের। এবার সেই ছবি বদলানোর তাগিদেই কি পুরনো সঙ্গীর হাত ধরলেন তিনি? 
সূত্রের খবর, শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় নাইডু এবং  জনসেনা পার্টির পবন কল্য়াণের। সেখানেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যা শোনা যাচ্ছে, তাতে লোকসভা ভোটে টিডিপি ১৭টি আসনে লড়াই করবে বলে ঠিক হয়েছে। বিজেপি এবং জেএসপি যথাক্রমে ৬ এবং ২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে খবর। বিধানসভার ক্ষেত্রে বিজেপি এবং জেএসপি মিলিয়ে ৩০টি আসনে লড়তে রাজি হয়েছে বলে একাংশের দাবি। টিডিপি জানিয়েছে, তারা ১৪৫টি আসনে প্রার্থী দিতে চায়। তবে বিজেপির টিম রাজ্যের হালহকিকত দেখে যাওয়ার পরই চূড়ান্ত ও বিশদ রূপরেখা স্থির হবে। 
এদিন জোটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই নাইডু বলেন, 'অন্ধ্রপ্রদেশকে বাজে ভাবে শেষ করা হয়েছে। বিজেপি-টিডিপির একসঙ্গে হওয়া এই রাজ্য এবং দেশের পক্ষে সব দিক থেকেই ইতিবাচক হবে।' যদিও ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, এত দিন পর্যন্ত ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে নানা ভাবে সহযোগিতা করা সত্ত্বেও হঠাৎ এই কৌশল বদলানোর নীতি কেন? ঘর গোছাতে শুরু করেছেন জগন্মোহন রেড্ডিও।


 


ওড়িশার ছবি...
অন্ধ্রের পাশাপাশি আরও যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, তার নাম ওড়িশা। সূত্রের খবর, এখানকার ২১টি লোকসভা কেন্দ্র এবং ১৪৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিজেপি এবং বিজেডির মধ্যে আলোচনা চলছে। একাংশের অবশ্য দাবি, সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু শেষ মুহূর্তের কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা বাকি। যদিও অন্য অংশের বক্তব্য, বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের বড় অংশ চাইছেন, একা লড়ুক দল। পরিস্থিতি নজরে রাখতে গত দুদিন ধরে ওড়িশায় কার্যত ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা তথা মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। শেষমেশ কে কার হাত ধরবে, তা অবশ্য সময়ই বলবে। আসলে ওই যে, রাজনীতিতে চিরবন্ধু বা চিরশত্রু কেউই নয়। 


 


আরও পড়ুন:প্রকাশ্য সভায় মোদিকে ‘অপয়া’, ‘পকেটমার’ বলে কটাক্ষ! রাহুলকে সতর্ক করল কমিশন